প্রিয় উক্তি......

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়..........

Tuesday, December 23, 2008

কোরিয়ায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষনাঃ আমার (তিক্ত) অভিজ্ঞতা (পর্ব-৭)

আমার কোর্স এন্ড রিসার্চ এক্টিভিটিস-তিক্ততার নতুন পর্ব শুরুঃ

প্রারম্ভিকা অনেক হলো, এবার মুল প্লটে ফিরে আসি। কোর্স ও রিসার্চ নিয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলো বলি।

তো দ্বিতীয় দিনই ল্যাবে গিয়ে প্রফেসরকে ধরলাম, জিজ্ঞেস করলাম, আমার রিসার্চ প্রজেক্ট কি হবে? উত্তর এলো, কে কি করে দেখতে থাকো আর আমাকে জানাও। এর পর ঠিক করা যাবে। এটা আমার নিজেরই ভুল হিসেবে ধরছি, নিজের রিসার্চ প্রজেক্ট কি হবে নিজেই জানি না, যদিও আমি বারবার জিজ্ঞেস করায় বলা হয়েছিলো, সব কিছু রেডি, তুমি এসেই শুরু করে দেবে। এবার জানতে হবে সব।

মলিকুলার বায়োলজি ল্যাবের বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট আর প্রটোকল গুলোর নাম শুনেছি, থিওরী পড়া আছে, কিন্তু প্র্যাকটিকালী করা হ্য়নি অধিকাংশই। তাই চাইলেও কাজ শুরু করতে পারবো না। তাই কাজ শেখা শুরু হলো, পাবলিশড আর্টিকেল গুলো পড়ি, আর সে অনুযায়ী কাজ শিখি সুজাতাদি-রেনা-কৃষ্ণা-কিরনের কাছ থেকে। এরা হেল্পফুল, ধরে ধরে সব শেখায়। আমি শিখি আর প্রফেসরের কাছে রিপোর্ট করি, সে বলে “ওকে! ওকে!!” দেশ থেকে ফাটাফাটি রিসার্চ করার স্বপ্ন নিয়ে গেছি, আমি আরো দ্বিগুন উৎসাহের সাথে শিখতে থাকি, সব শিখে ফেলতে হবে। সেদিন গুলোর কথা মনে পড়লে এখন নিজেই হাসি।

যাহোক, আমার এমন উৎসাহ-উদ্দীপনা আর কন্টিনিউয়াস খোচানোতে ত্যক্ত হয়ে প্রফেসর বল্লো, তুমি ধানের “কাইনেজ মিউট্যান্ট” নিয়ে কাজ করো। এই মিউট্যান্ট এর বীজ কোথায় পাওয়া যাবে? রেনার কাছে। গেলাম রেনার কাছে, বেচারীর মুখ কাদো কাদো, কারন সে এটা নিয়ে কাজ আর করছে না, অনেক আগেই নিজ থেকে বাদ দিয়েছে, এটা তার পিএইচডি প্রজেক্টও না, তাই সে জানেনে এজ্যাক্টলী কি অবস্থা ঐ মিউট্যান্ট গুলোর। নেক্সট রিসোর্স পারসন হোসাং। এর সাথে প্রথম থেকেই আমার সম্পর্ক উষ্ণ না, কারন কৃষ্ণার সাথে তার সম্পর্ক ভালো না, আর আমার সাথে কৃষ্ণার সম্পর্ক ভালো। ব্যাস, হয়ে গেলো, হোসাং আমাকে বলে “আই দোন্নো!”

নেক্সট ৭দিন ধরে বীজ খুজে বেড়াই, প্রফেসরকে আর আপডেট করার কোন খবর নেই, সো প্রফেসরের ধারনা আমি ফাকি দিচ্ছি, তার টাকায় খেয়ে-দেয়ে মজা করে বেড়াচ্ছি। ইভেন আমাকে কোনো আর্টিকেল পড়তে দেখলেও ওর সহ্য হ্য় না, এসে বলবে, “হোয়াট আর ইউ ডুয়িং, ডু সামথিং, এন্ড রিড দিজ আর্টিকেলস এট হোম”। আমার রাতটাও খাবে সে।

৭দিন পর বল্লাম, বীজ নাই, কোথাও নাই। ধমক খেলো রেনা আর হোসাং। হোসাং আরো ক্ষেপা আমার উপর। ল্যাব সম্বন্ধে প্রফেসরের ধারনা এমনই, যে যার মতো তথ্য গোপন করে, সেও খোজ রাখে না। তাই প্রজেক্ট বাতিল। নেক্সট প্রজেক্ট “প্রোটিয়েজ মিউট্যান্ট”। একটা লিষ্ট হাতে পেলাম অনেকগুলো প্রোটিয়েজ মিউট্যান্ট এর। বলা হলো সিলেক্ট করো। কৃষ্ণার সাথে পরামর্শ করে কয়েকটা সিলেক্ট করলাম, কারন এগুলোতে আগে অল্প কাজ হয়েছে, এবং প্রমিজিং লাইন। আবার বীজ খোজা। এইবার আবার হোসাং। সেইই দায়িত্বে। আবারও “আই দোন্নো!”

ছোট বাচ্চার মত কিছু হলেই প্রফেসরের কাছে দৌড়ায় কে? সবার সাথে কথা বলে বের করার চেষ্টা করি। সবাই বলে হোসাং জানে, হোসাং বলে “আই দোন্নো!”। এরই মাঝে ডঃ ভাসু এসে জয়েন করলো, তার সমস্যা ভিন্ন। এসে জয়েন করলো ভালারমাথি, ইন্ডিয়ান মেয়েটা, আমার সাথে পিএইচডি শুরু করবে, তারও প্রজেক্ট দিতে হবে।

আমার উপর প্রফেসর একটু বিরক্ত, কোথায় দেশ থেকে সব কাজ শিখে এসে ওখানে ঝাপিয়ে পড়বো, তা না, এসে শিখছি। আবার সময় নষ্ট করে আর্টিকেল পড়ছি।

কম্পিউটার নিয়েও ঝামেলা। সবাই টাকা জমিয়ে ল্যাপটপ কেনে, কারন ল্যাবে কম্পিউটার অল্প কয়েকটা, আবার তার কয়েকটা অফিসের কাজে ব্যবহৃত হয়, আর কয়েকটা কোন ইন্সট্রুমেন্টের সাথে এটাচড। আমি মহাফাপরে। দিনের বেলা কৃষ্ণা বা সুজাতিদির কম্প্যুটারে সহজে এক্সেস আছে, আর রাতে কোন ল্যাব কম্পিউটারে হামলা। এই নিয়েও হোসাং এর সাথে সমস্যা। সে তখন কম্পিউটার-প্রিন্টারের দায়িত্বে। আমি কোনটা ব্যবহার করতে গেলেই ঝামেলা বাধায়, নানা ওজর দেখিয়ে মানা করে। আমিও একবার ওপেন করতে পারলে আলাদা ইউজার একাউন্ট ওপেন করে রাখি, সে আরো ক্ষেপে যায়। এই নিয়েও প্রফেসর নাখোশ, তাই ঐ দায়িত্ব আমার ঘাড়ে দিলো শাস্তি হিসাবে। আমাকে কম্প্যুটার এক্সপার্ট বানিয়ে ছাড়বে, যেনো আমি জোড়াতালি দিয়ে আমার জন্য একটা কম্প্যুটার বানাতে পারি। আমি ঐ পথ দিয়েও গেলাম না, বরং একটা ল্যাব কম্প্যুটার দখল দিলাম। হোসাং এর রাগ দেখে কে!

সেই রাগ দেখানোর জায়গা ধানের বীজ, আমার দরকার, সে দেবেনা। প্রফেসর আমাকে বসে থাকতে দেখে ক্ষেপে চুড়ান্ত। বসিয়ে বসিয়ে তো আর বেতন দেয়া যায় না, কাজে লাগাতে হবে। আর কাজে লাগানোর জায়গা অনেক আছে, কায়িক শ্রমের সুযোগ। আমাকে কাজে লাগানো হলো।

প্রফেসর বিকে-২১ এর হেড, তার আলাদা অফিস লাগবে। গ্লাস হাউজের বিল্ডিং এর ফার্ষ্ট ফ্লোরে একটা ল্যাব রুম পড়ে আছে অব্যবহৃত, সেটা টার্গেট। “সিল চা নিম” করবে কাজটা, হেল্প দরকার, আমি ফাকি দিচ্ছি, তাই আমাকে পাঠানো হলো ডেপুটেশনে। আমি গেলাম, কি করতে হবে ধারনা নেই।

গিয়ে দেখলাম রুমে সিমেন্টের তৈরি কয়েকটা বেঞ্চ ও সেলফ আছে, আর সিল চা নিম একটা বড় হাতুড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

বেঞ্চ ও সেলফ হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাংতে হবে!

চলবে…………।

No comments:

Post a Comment