প্রিয় উক্তি......

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়..........

Friday, December 12, 2008

কোরিয়ায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষনাঃ আমার (তিক্ত) অভিজ্ঞতা (পর্ব-২)

প্রস্ততি, আরেক ভন্ডামী, খুশীর খবর এবং যাত্রা।

প্রথম পর্বে বলেছি আমার প্রস্তুতি শুরু হলো। মানে যা হয়, কেনাকাটা-ছুটি নেয়া-ভিসার জন্য কাগজ-পত্র রেডি করা। জানুয়ারীতে সেবার কুরবানীর ঈদ ছিলো, দ্বিগুন উৎসাহে ঈদের ছুটির আগেই শিক্ষা ছুটি নেয়া শেষ। বাকী শুধু ভিসা, ঈদের পরে করবো আবেদন।

এর মাঝে আর একটা ভন্ডামী করা হলো। আমি স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলাম একোমোডেশন সম্বন্ধে। পরামর্শের জন্য। আমাকে বলা হলো (কৃষ্ণা) আমি চাইলে ভার্সিটির ডরমেটরীতে থাকতে পারি, খরচ মাসে ১০০ ডলার, তবে রান্না করা যাবে না। আবার ল্যাব মেম্বারদের জন্য একটা ডরমেটরী আছে, ল্যাব থেকেই মেনটেইন করা হয়। ওখানেও ভাড়া মাসে ১০০ ডলার, রান্নাও করা যাবে। কোনটা বাছবো? স্বাভাবিক ভাবেই ল্যাব ডরমেটেরী। ল্যাবের আবার ডরমেটেরীও আছে, ভাবুন তো শুনতে কত আনন্দ লাগে? বলা হলো আমাকে শুধু বেড কিনতে হবে। বাকী সব আছে। আমিও খুশী হয়ে বলে দিলাম “আমার জন্য একটা সিট বুক করো!”। হাহাহা। এটাকে কেন ভন্ডামী বললাম তা বলবো পরে।

মনে তখন খুব আনন্দ! বাইরে যাওয়া হচ্ছে অবশেষে পিএইচডি করতে! যারা গেছেন তারা অনুভব করতে পারছেন হয়তো। এর মাঝে আর একটা বিশাল খুশীর খবর, ২০০৭ এর জানুয়ারীর ৯ তারিখে কনফার্ম হলাম যে আমার ওয়াইফ কনসিভ করেছে। আমি বাবা হতে যাচ্ছি। প্ল্যান আরও পাকা, গিয়েই নিয়ে যাবো, যত দ্রুত পারা যায়।

ঢাকা থেকে ব্যাংকক হয়ে বুসানে থাই এয়ারলাইন্সের একটা ফ্লাইট ছিলো, ট্রাভেল এজেন্টের ভুলে সেটা জানতে পারলাম না, আমি যাওয়ার পর অবশ্য সে আমার বাবাকে বলেছে তার ভুলের কথা। আমি ড্রাগন-ক্যাথে প্যাসিফিকে ইনচোন (Incheon) এয়ারপোর্ট (Seoul-এ) যাবো। আমার আগে যাওয়া বন্ধুটা পাশের সিটি “Suwon” এ থাকে, তার ওখানে এক রাত কাটিয়ে পরে লিমোজিন বাসে করে রওনা দেবো বুসানের উদ্দেশ্যে। বুসানে Nopodong Bus Terminal থেকে আমাকে নিতে আসবে কেউ ল্যাব থেকে। প্ল্যান ফাইনাল।

কোরিয়ান এমব্যাসিতে ভিসা নিতে অনেকের অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে, আমার তেমন কিছু না হলেও আমার পাসপোর্টটা আরেক জনকে দিয়ে দেয়া হয়েছিলো, সেই লোক এসে ফিরিয়ে দেয়ার বাঁচোয়া। তার পাসপোর্টটা আমাকে দিতে গিয়েই ধরা পড়েছিলো অবশ্য। যাহোক এটা ক্ষুদ্র একটা ব্যাপার!

২০০৭ এর জানুয়ারীর ২১ তারিখ রাতে বাসার সবাইকে কাদিয়ে (আমি সবার ছোট), নিজের চোখ শুকনা রেখে রওনা দিলাম। মনের অবস্থা জটিল। প্রিয়জনদের ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট-বাইরে যাওয়ার আনন্দ-শংকা-ভয় মিলে এক জটিল মানসিক অবস্থায় আমি। হংকং পর্যন্ত অন্য বিভাগের এক সিনিয়র কলিগের আড্ডা মেরে ভালোই গেলো। কোরিয়া পর্যন্ত একলা। এয়ারপোর্টে সব ফরমালিটি শেষ করে বের হলাম। ইমিগ্রেশন অফিসারটা অবশ্য আমার চেহারাটা অনেকক্ষন ধরে দেখলো, বাদামী রং আবার বাংলাদেশী কিনা।

বাইরে এসে দেখি বন্ধু নেই, আসার কথা এতক্ষনে। হংকং এয়ারপোর্টে মেইল চেক করেছিলাম লাষ্ট। ও বলে দিয়েছিলো দুপুর ৩টার মধ্যে ও না আসলে যেনো ইন্সট্রাকশন মতো Suwon-এ হোটেল ক্যাসল পর্যন্ত বাসে চলে যাই। পরে শুনেছি ওর প্রফেসর অনুমতি দেয় নি বিধায় ও আসতে পারে নি। এয়ারপোর্টে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের বাটপারি ওখানেও আছে, তবে অনেক কষ্টে ভাংগা ইংরেজীতে Suwon যাওয়ার বাসের কাউন্টার আর বাসের খোজ পেলাম। মোটেই দুরে না, তবে বুঝতেই সমস্যা। ওদের অধিকাংশই ইংরেজী বুঝে না। এই নিয়ে অনেক মজার ঘটনাটা আছে। বলা যাবে প্রসংগ এলে। যাহোক, বাস থেকে নেমেই দুই বন্ধুতে কোলাকুলি। কি তীব্র ঠান্ডা! ০-১ ডিগ্রী সেলসিয়াস নাকি ছিলো। আমি কাপছিলাম। বন্ধুর সাথে ওর বাসায় গেলাম বাসে করে, গল্প-গুজবে রাতটা কাটালাম। বন্ধু একটা ইলেকট্রিক বেড দিলো, ওর কাছে ছিলো এক্সট্রা। পরদিন রওনা দিলাম বুসানের উদ্দেশ্যে।

৫ ঘন্টার জার্নি শেষে পৌছালাম বুসান, বাসস্ট্যান্ড থেকে ফোন করলাম কৃষ্ণাকে। ফোন কার্ড কিনে নিয়েছিলাম Suwon-থেকেই। কৃষ্ণা এলো এক সিনিয়র কোরিয়ান ল্যাবমেটকে নিয়ে, ইয়ানজে। পরিচয় হলো দুইজনের সাথে। ইয়ানজে আমার দেখা খুব অল্প কয়েকজন কোরিয়ানদের একজন, যারা মানুষ হিসেবে খুব ভালো ছিলো!

রওনা দিলাম ডরমেটরীর উদ্দেশ্যে। ভন্ডামী উন্মোচন শুরু হলো….।

পরের পর্বঃ হোয়াট এ ওয়েলকাম! এবং অতঃপর…..

No comments:

Post a Comment