প্রিয় উক্তি......

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়..........

Tuesday, January 27, 2009

বর্তমান প্যাচালঃ পরিচিত মন্ডলে রাজনৈতিক ডিগবাজি



দেশটা আমাদের দুইভাগে বিভক্ত, আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। সব প্রতিষ্ঠান-মাঠ-ঘাট-পুকুর-পার্ক-বাস স্ট্যান্ড-রেল স্টেশন…. সব!

এইবার আওয়ামী লীগ জিতেছে সব ছাপিয়ে, সাভাবিক ভাবেই বানের জলে সবাই ভেসে জমা হচ্ছে আওয়ামী শিবিরে।

লেখা-পড়ার জন্য ছুটিতে বিদেশে এলেও দেশে নিজের চাকরীদাতা প্রতিষ্ঠানের খবরাখবর রাখি। আমার প্রতিষ্ঠানেও আলীগ-বিএনপির দলাদলি আছে। যাহোক, আজ একটা ইমেইল পেলাম সকালে, একজন শ্রদ্ধেয়া কলিগ, যিনি বিএনপি আমলে আমাদের উইং এর বিএনপি সমর্থিত গ্রুপের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন, উনি এবার প্রতিষ্টানের প্রধান একটি সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত গ্রুপের পক্ষ থেকে দাড়িয়েছেন। ইমেইলটা পেয়ে অনেকক্ষন হাসলাম। হায়রে!

উচ্চশিক্ষিত লোক গুলোই বেশি ধান্দাবাজ, আবার প্রমান হলো। বিএনপি-জামাতের আমলে “বিজা” ব্র্যান্ডের মধু, আর এখন “চৌদ্দমার্কা” মধু, সব কিছুতেই এদের সমান রুচি। গত আওয়ামী আমলে একজন সিনিয়র কলিগ কে দেখেছিলাম “বংগবন্ধু গবেষনা পরিষদ” গঠন করতে। ২০০১ এর পর উনি করলেন “জিয়া গবেষনা পরিষদ”, এর পর জামাতের দিকে ঝুকলেন।

আমি সেই ইমেইলে রিপ্লাই করলাম, “আলোচ্য ব্যাক্তি ছাত্রজীবনে খুব ভালো একজন এ্যাথলেট ছিলেন, উনি ভালো করেই জানেন কিভাবে ট্র্যাকের লেন চেন্জ করতে হয়, আর কিভাবে ডিগবাজি দিতে হয়। তাকে বাহবা দিন…”

খুব মজা পাচ্ছি। একটু আগে আর একটা ইমেইল পেলাম। ইমেইলে সেই নির্বাচনে দাড়ানো অন্য একজন প্রার্থী ভোট চেয়েছেন। হুমম! ডিজিটাল বাংলাদেশ একেই বলে। ইমেইলে ভোট চাওয়া…….

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ভাবতেই ভালো লাগছে………।



Monday, January 26, 2009

কারো পৌষ মাস তাই দুদকের আইনজীবিরা আংগুল ফুলিয়া বটগাছ!

আজকের “আমাদের সময়” এ দেখলাম নিউজটা। দুদকের দুর্নীতি বিরোধী জেহাদে সবচে লাভবান নাকি হচ্ছে বিশেষ জজ আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবিরা (পিপি)।

তারা সবাই কিনেছেন নতুন মডেলের গাড়ি। কেউ কেউ নামে বেনামে ফ্ল্যাট।

আসুন দেখি কেন তারা আংগুল ফুলে বটগাছ:
১। প্রত্যেকের মাসিক বেতন ৭৫০০০ টাকা।
২। দুদকের মামলা নিস্পত্তির জন্য ৫০০০০ টাকা।
৩। দুদকের কোন মামলা খারিজ হয়নি। আর যা রায় হয়েছে তাও পেয়েছো রাষ্ট্রপক্ষ।
৪। অনেক মামলার আসামিই পলাতক। তাই রায় হচ্ছে দ্রুত। টাকাও আসছে দ্রুত।

মামলা বন্টন নিয়েও নাকি চলছে পারসুয়িং, লবিয়িং এর অভিযোগ। কেউ অনেক পাচ্ছে। কেউ মোটেও পাচ্ছে না। কেউ পাচ্ছে ২-৩টা, কেউবা ২০-২২টা। কেউ বা বেশী করে পাচ্ছে পলাতক আসামিদের মামলা। এটা নিয়ে পিপিদের মনেই অনেক ক্ষোভ। পারস্পরিক অবিশ্বাস, অভিযোগ। তবে গাড়ি কেনার টাকার উতস জিগ্গেস করলে সব শেয়ালের এক রা “ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কিনেছি”।

ফ্ল্যাট কেনার কথা সবাই এড়িয়ে গিয়ে আবার একাত্মতা দেখিয়েছেন।

আহা! কারো সর্বনাশ, কেউ ফুলে বটগাছ। মানুষের পাপের দালালী করা এই শালারা এই সুযোগেও হাতিয়ে নিচ্ছে অনেক টাকা। আগে করতো আম্বা-বিম্পি-জামাত। এখন মুআ-ফুআর দুদক। লবিয়িং উনারা এখানেও ভুলতে পারেননি। আশাকরি সামনের দিন গুলোতেও উনাদের এই পারফরমেন্সে ভাটা পড়বে না।

চলুক। মেথররা না থাকলে ময়লা পরিস্কার করবে কে?

খবরের লিন্ক: ওয়ান ইলেভেনের ফায়দা নিচ্ছেন বিশেষ আদালতের পিপিরা!

কমন কৌতুক: প্রিয় ফল

একখান কমন কৌতুক কই। কম বেশি সবারই জানার কথা। আমি ব্লগে জমা রাখলাম

একবার হোয়াইট হাউস থেইকা বাংলাদেশের তিন প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে ব্রেকফাস্টের দাওয়াত দেয়া হইলো। তবে অনুরোধ করা হইলো তারা যেন তাদের প্রিয় ফল সাথে কইরা নিয়া আসেন, ঐটা তাদের পিছন দিয়া ঢুকাইয়া দেয়া হইবো। প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানরা হইলেন শেখ মুজিব, জিয়া, এরশাদ। কিন্তু উনাদের সেক্রেটারীরা রাষ্ট্রপ্রধানদের ব্যক্তিগত রসিকতা ধইরা পেছনে ঢুকানোর লাইনটা অনুবাদ না কইরাই দিলো।
যথাসময়ে একে একে তিনজন নিজেদের প্রিয় ফল নিয়া হোয়াইট হাউসে হাজির। এবং শেষের কামটাও করা শুরু হইলো। শেখ মুজিব নিছিলো জাম, জিয়া লিচু। মুজিব ব্যাথায় কাতরাইতেছে, কিন্তু জিয়া হাসে। শেখ মুজিব কইলো “কিরে তুই হাসছ ক্যা? আমারে জাম দিছে তাই আমি কানতাছি, আর তোরে তো কাটাআলা লিচু দিছে?”
জিয়া কয় “আমি এরশাদের কথা ভাইবা হাসতেছি, হারামজাদা আইতেছে কাঠাল লইয়া।”

(বি:দ্র: এই কৌতুকটা কওয়ায় আমি বোথ ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের বন্ধুগো কাছে গাইল খাইছি, কেন বুঝি নাই)

এডা পরিশ্রমের কৌতুক: পেলাস ১৮

ইদানিং জলপই লইয়া ব্লগে বহুত কথা হইতেছে। আমার মেমোরী কহিলো সেনা অফিসারগো পরিশ্রমের পরিমান লইয়া একটা কৌতুক স্টকে আছে। উহাই ফরমাইলাম নিচে। কমন পড়িতেও পারে।

তিন আর্মী অফিসার আড্ডা মারছে। তাদের ব্যাটম্যানরা আশেপাশেই দাড়িয়ে আছে(এখন এই প্রথা নাই মনে হয়)। আড্ডার বিষয় সেক্স কতটুকু আনন্দের আর কতটুকু পরিশ্রমের।
১ম অফিসার: আমার মনে হয় সেক্সে ৫০% আনন্দ, ৫০% পরিশ্রম। (বাকী দুইজন সবেগে মাথা নাড়ালো, তারা একমত না)
২য় অফিসার: আমি একমত না। আমার মতে ৪০% আনন্দ, ৬০% পরিশ্রম।
৩য় অফিসার: আমি কারো সাথেই একমত না, আমার কাছে সেক্স হচ্ছে ৬০% আনন্দ, ৪০% পরিশ্রম।
এই সময় একজন ব্যাটম্যান বল্লো: কিছু মনে কইরেন না স্যারেরা। আমার ধারনা সেক্স পুরাটাই আনন্দের। কারন ১% পরিশ্রমের হইলেও আমাগো দিয়া করাইতেন।

(কাউরে আঘাত দিবার লাগিয়া না, শুধু মজা করিবার জন্যই দিলাম।)

Saturday, January 24, 2009

বিশিষ্ট নাট্যকার, চিত্র পরিচালক, সাংস্ক্বতিক ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আল মামুন আর নেই। আসুন তার স্ম্বতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই

বিশিষ্ট নাট্যকার, চিত্র পরিচালক, সাংস্ক্বতিক ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আল মামুন আর নেই। দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর ২১ আগস্ট সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে বারডেম হাসপাতালে এই মেধাবী নাট্যকার, অভিনেতা ও পরিচালক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আসুন তার স্ম্বতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

আরো জানতে পড়ুন:
১। এক নজরে আবদুল্লাহ আল মামুন
২। একটি প্রতিষ্ঠানের বিদায়
৩। আবদুল্লাহ আল মামুনের বিদায়
৪। উৎসবের আয়োজক আজ আর নেই
শুনুন তার বিখ্যাত ছবি সারেং বউ এর জনপ্রিয় গানটি।

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

UA:A [1.0.9_379]

বিদিশার প্যান্টি সমাচার

ঘটনাটা কয়েক বছর আগের। এতোদিনে অনেকেই শুনছেন মনে হয়। তবুও বলি।

সাল ২০০৪। এরশাদ আর বিদিশা একত্রে সংসারধরমো চালাইতেছেন। তাদের সংসার প্রেসিডেন্ট প্যালেস থেকে জাতীয় পারটির অফিস পরযন্ত বিস্ত্বত। এমনি একদিনের ঘটনা।
বিদিশা বাইরে যাইবেন, কিন্তু তার শখের লাল প্যান্টিখান পাইতেছেন না। স্বাভাবিকভাবেই দোষ পড়লো বুয়ার উপর। তাকে চারজ করা হইলো। এরশাদের বুয়া বলিয়া কথা। সে খ্খিপ্ত হইয়া এরশাদের কাছে ফরমাইলো “সাহেব! বিবিসাব কয় আমি নাকি হের প্যান্টি চুরি করছি! সাহেব আপনি তো জানেন আমি নিচে কিছু পড়িনা।”

UA:A [1.0.9_379]

দেশ-১

তুমি বলবে?
গাইবে গান?
হ্বদয় থেকে উতসারিত
শত-সহস্র শব্দ নিয়ে
সাজাবে কবিতা?
তুমি কি পারবে?

তোমার মনে হাজারো
কষ্ট, অভিযোগ, গ্লানি!
তোমার ললাটে ভাগ্যহীনের ছাপ!
তুমি ক্লান্ত, শ্রান্ত, হতাশ, বিরক্ত!
তোমার মনে দাবানলের লেলিহান উন্মত্ততা
রাগের! খ্খোভের!

এতকিছুর পর, তবুও
তুমি কি পারবে?
তোমায় কথায়, গানে, কবিতায়
দেশকে ভুলে থাকতে?!

নিরপেখখ থাকা খুব মুসকিল

নিরপেখখ থাকা খুব মুসকিল
বিয়ের পর মা বলে
“পেটে ধরা ছেলে আমার পর হয়্যা গেছে”
বউ পাশ ফিরে শোয়, আর বলে
“তুমি তো মায়ের ছেলে, বিয়ে করার
কি ছিলো দরকার”

আমি দোটনায়
দুপখখই ভাবে ‘মেরুদনডহীন”
বাবা মিটিমিটি হাসে,কারন
পুরুষের এ কষট শিরোনামহীন

নিরপেখখ থাকা খুব মুসকিল
যেখনে আবেগ থাকে
ভালোবাসা থাকে, সেখানে
নিরপেখখ থাকা খুব মুসকিল

USB: United States of Bangladesh

কোরিয়ায় ছিলাম কিছু দিন । ঐ সময়ের এক মজার অভিজ্ঞতা।

কোরিয়ানদের জ্ঞানের পরিধি খুবই কম, অনেক দেশের নামই শুনে নাই । সাদা চামড়াদের ওরা খুব দাম দেয়, আমেরিকানদের দেবতা মনে করে । আর আমাদের তো পাত্তাই দেয়না।

আমার এক বন্ধুর কাহিনী । ও বাড়ি ভাড়া নিতে গেছে । বাড়িওয়ালী interview নিচ্ছে । স্বাভাবিক ভাবেই দেশের নাম জানতে চাইলো। আমার বন্ধুর অতীত অভিজ্ঞতা ছিলো এই লাইনে । দেশের নাম বললো “USB”, বাড়িওয়ালী এর মানে জানতে চাইলো, ও নির্বিকার ভাবে বললো “United States of Bangladesh”, আমি তো অবাক । আমার চেয়ে বেশি টাসকি্ খেয়েছে বাড়িওয়ালী। বলে “সত্যি! বাংলাদেশ কি আমেরিকার মতো?”

ফলাফল বুঝতেই পারছেন । এখনো হাসি ঐ ঘটনা মনে পড়লে ।

Saturday, January 3, 2009

কোরিয়ায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষনাঃ আমার (তিক্ত) অভিজ্ঞতা (শেষ পর্ব)

ডেমকেয়ার লাইফ ও পলায়ন প্রস্তুতিঃ

আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে কোরিয়ায় কাটানো শ্রেষ্ঠ সময় কোনটা? আমি নিদ্বিধায় বলবো অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত একমাস। প্ল্যান করা আর সে অনুযায়ী কাজ করে ১০০% সফল হওয়ার সময় সেটা।

অক্টোবরের ২৬ তারিখ খবরটা পাওয়ার পর শুরু হলো গোপনীয়তা রেখে, কোনরুপ সন্দেহ না জাগিয়েই দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া। আসল ব্যাপারটা টের পেলে আটকে দেবে। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে এক নেপালী স্টুডেন্টের সংগে, চলে যেতে চেয়েছিলো বলে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশে দিয়েছিলো। সুজাতা দিদি আর কৃষ্ণা-কিরনকে জানিয়েছিলাম। ওরা নানা ল্যাব টেকনিক দ্রুত শিখিয়ে দিচ্ছিলো। কিন্তু প্লেনের টিকিট কাটা, রেনা-বলোরামার সন্দেহ না জাগিয়ে ডরমেটরী থেকে ব্যাগ এন্ড ব্যাগাজ বের হয়ে আসা, কেনাকাটার জন্য দেশি লোকদের হেল্প ছাড়া সম্ভব ছিলো না।

আগের বার দেশে যাবার সময় রাউন্ড ট্রিপের টিকেটের ফটোকপি ল্যাবে জমা দিতে হয়েছিলো, এবারও হবে। কিন্তু আমি তো এবার করবো ওয়ান ওয়ে টিকিট। ওরা ওয়ান ওয়ের টিকেট দেখলে সন্দেহ করবে যে আমি আর ফিরবো না। একটু দু’নম্বরী করলাম। প্রথমে রিজারভেশন দিলাম রিটার্ন সহ। রিজারভেশনের ডকুমেন্টটা ফটোকপি করে রেখে পরদিন আবার গেলাম ট্রাভেল এজেন্সীতে রিটার্ন ক্যানসেল করে ওয়ানওয়ের জন্য। ফিরিয়ে দিলাম আগের মুল ডকুমেন্টটা। এক সপ্তাহের মধ্যে টিকেট নিতে হবে, ঐ সময় টাকা হাতে নেই তেমন, ধার নিলাম এক ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে। ২০ তারিখে স্কলারশীপের টাকা পাবোই, তখন দিয়ে দেবো। টিকিট কেটে রেখে দিলাম, নভেন্বরের ২৬ তারিখ, রবিবার।

ঐ সময়টাতে ল্যাবে একটু ড্যাম কেয়ার ভাবে চলেছি। ওরা যা বলে তাই “ওকে” বলে সটকে পড়ি। তেমন কোন কাজ করি না, আর সুযোগ পেলেই বিভিন্ন সেমিনার-কনফারেন্সে যাই, নতুন জায়গা দেখার জন্য। আসলে সম্পর্ক মেরামতের জন্য প্রফেসর আমাকে বিভিন্ন জায়গায় নিতে চাইতো। যেখানে আগের ৯ মাসে ইউনি ছাড়া দুরে কোথাও নেয় নি কোন কনফারেন্সে, সেখানে শুধু নভেম্বরেই বুসান থেকে অনেক দুরে ২টা সিটিতে দুটি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স!

আরেক ক্যাম্পাসে কিছু ধানের মিউট্যান্ট এর বীজ লাগিয়েছিলাম কয়েকমাস আগে, নভেম্বরে সেসব হারভেষ্ট করে শুকিয়ে প্যাকেট করার কাজও করতে হলো। তাই ল্যাবে থাকি কম এই অযুহাতে।

এবার ডরমেটরী ছাড়ার পালা কোন সন্দেহ না জাগিয়ে। ল্যাবে একদিন ঘোষনা দিলাম আলাদা বাসা পেয়ে গেছি, এক বন্ধুর সাথে আপাতত থাকবো, পরে ফ্যামিলি নিয়ে থাকবো। এক শনি-রবিবার ঘোষনা দিয়ে নিজের সব কিছু নিয়ে এক ছোট ভাই সহ রওনা দিলাম আরেক বন্ধুর বাসায় (সে বিয়ে করতে তখন দেশে, চাবি আমার কাছে।), তাকে ফোনেই বলে রেখেছিলাম।

এমন ড্যাম কেয়ার স্টাইলে চলায় ল্যাবে অনেকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়, কোন সুত্র পায় না। ওদিকে দিদি আর কৃষ্ণাদার সব জেনেও না জানার ভাব করে আমাকে সাহায্য করতে থাকে। এর মধ্যে হিন্দি শেখানোর একটা টিউশনী পাই, ঘন্টায় ১৫ ডলার, সপ্তাহে ৪ ঘন্টা। এক কোরিয়ান স্কুল টিচার ভারতে যাবে বেড়াতে, সে জন্য শিখতে চায়। ল্যাবমেট রেনার সাথে কিভাবে যেন পরিচয়, সে আমার জন্য যোগাড় করে দিলো। আমি আর নিলাম না, বল্লাম একটু দেশে যেতে পারি, ফিরে এলে পড়াবো, নাইলে অন্য কাউকে রিকমান্ড করে যাবো। আমি চলে আসার পর নেপালী কৃষ্ণাই শিখাতো।

সময় এগিয়ে আসতে থাকে, আমার প্রস্তুতি চলতে থাকে, কেনাকাটা, সব গুছানো। ল্যাবে হাতের কাজ গুলো গুছিয়ে দেয়া যেন চলে যাবার পর আমার জন্য কৃষ্ণার সমস্যা না হয়। ইউএনডিপি’র একটা প্রোগ্রামের আওতায় কয়েকটা কোরিয়ান স্কুলে বাংলাদেশের উপর পরিচিতিমুলক ক্লাশ বাকি ছিলো, সিডিউল অনুযায়ী দ্রুত শেষ করলাম, নতুন ক্লাশ নিলাম না। বুসানের বাংলাদেশীরা এসব ক্লাশ নিতে উৎসাহী ছিলো না, তাই আমিই নিতাম অনেক।

সব ঠিক প্ল্যান অনুযায়ী এগোলেও আসল সমস্যা প্রফেসরকে দেশে যাবার কথাটা বলা। মাত্র কয়েকমাস আগে গিয়েছি, এদিকে টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত গ্যান্জাম হয় প্রফেসরের সাথে, এর মধ্যে আবার টাকা খরচ! সুতরাং তাকে রাজী করানো সহজ না। বাবা-মা-বউ কাউকে অসুস্থ বানাতে হবে অযুহাত হিসেবে, যদিও প্রিয় মানুষগুলোকে মিথ্যা অসুস্থ বানাতে ইচ্ছা করে না। আগে এক পাকিস্তানী ছাত্র ল্যাব থেকে পালিয়েছিলো বাবাকে অসুস্থ করে, তাই এটা কেমন কাজ করবে তা নিয়েও সন্দেহ। যেতে হবেই, আমি ডেসপারেট, রাজি না হলে না বলেই…।

দেশের যাবার কথা বলার জন্য ডেট ঠিক করলাম ১৭ নভেম্বর, শনিবার। সেদিন সবাই মিলে ল্যাবের গ্লাস-হাউজ পরিস্কার করবো, এমনদিনে প্রফেসরের মন-মেজাজ ভালো থাকে। কিন্তু তবুও টেনশনে আছি, বাবা নাকি মা নাকি বউকে অসুস্থ বানাবো। অযুহাত খুজছি মন মত। মিথ্যা খুব ভালো বলতে পারি না। ধরা খাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।

১৫ নভেম্বর রাতে দেশে সিডর বয়ে গেলো। মনটা স্বভাবতই খারাপ। এত ক্ষয়ক্ষতি সারা দেশে! পরিবারের সবাই ঢাকায়, দেশের বাড়ীও উত্তরবংগে, তাই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত কেউ হয় নি, এটাই শান্তি। ১৭ তারিখ কৃষ্ণার বাসায় সকালে নাস্তা করছি, ওখান থেকেই ল্যাবে যাবো দুজন। টিভিতে সিডর এর ভয়াবহতা দেখছি। কৃষ্ণা জিজ্ঞেস করে, দেশে সবাই ভালো তো? আমি উত্তর দেই, হ্যা ভালো! পরিবারের কেউ তো দক্ষীনে থাকে না। কৃষ্ণা মিটিমিটি হাসে আর বলে, “কেমনে ভালো? দেশে তো সবাই তো তোমার পরিবারের মত”। আমি ওর হাসির অর্থ ধরতে পারছি না। কিরন চা দিতে এলো, সেও হেসে বল্লো, বুঝো নাই কৃষ্ণার কথা? আমি বুঝে গেলাম কি করতে হবে।

গ্লাস-হাউজে কাজ শেষ করে ওয়েট করছি কখন প্রফেসর আসবে, সে এলো না। ভালই হলো, সামনি সামনি মিথ্যা বলা খুব কঠিন। আমি ফোন করলাম প্রফেসর কে। তাকে বল্লাম, “তুমি তো জানো বাংলাদেশে সাইক্লোন বয়ে গেছে, অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আমার একবার দেশে যাওয়া দরকার”। এমন বিশ্বাসযোগ্য কারন আর আছে! এমন মানবিক আবেদন! সে রাজী তবে ১৯ তারিখ আবার কথা বলতে বল্লো। আমি বেজায় খুশি। খুশি দিদি আর কৃষ্ণাও।

১৯ নভেম্বর, সোমবার সকালেই আগের ফটোকপি করে রাখা রিটার্ন ট্রিপের রিজার্ভেশনের কাগজে ইস্যুর তারিখের জায়গায় ১৯ নভেম্বর বসিয়ে ফটোকপি করলাম। প্রফেসর দুপুরে এলো, আমি খুব ব্যস্ত ভাব দেখিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তার কাছে যাই না। কারন, মিথ্যা বলতে হবে সামনা সামনি, আমার জন্য খুব কঠিন। আর এক মিথ্যা ঢাকতে আরো মিথ্যা বলতে হয়। ধরা পড়ার চান্স বেশি। প্রফেসর অনেকক্ষন ওয়েট করে একসময় নিজেই ডাক দিলো, গেলাম, যথাসম্ভব কম কথায় উত্তর দিয়ে বলে, মুখটা দুঃখী দুঃখী ভাব করে পার পেয়ে গেলাম।

ল্যাব মেম্বাররাও জেনে গেলো আমি যাচ্ছি সাইক্লোনের কারনে পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে। এই আর এক জ্বালা, মুখে সারাক্ষন দুঃখী ভাব ধরে রাখতে হয়। ডঃ প্রকাশ অবশ্য সন্দেহ করেছিলো, বলেই ফেল্লো, “তোমাকে গত একমাস ধরে এত রিল্যাক্স দেখাচ্ছে কেন? আবার দেশে যাবা?” আমি কেটে পড়ি, শোকে-দুঃখে-দুঃশ্চিন্তায় কাবু হবার ভাব ধরে সময়টা পার করি।

সব প্রস্তুতি নিয়ে ২৬ নভেম্বর, রবিবার বিকালে রওনা দিলাম বুসানের গিমহে এয়ারপোর্টের দিকে। সেদিন সকালে ঘুরে বেড়িয়েছি ক্যাম্পাসে এক ছোট ভাইয়ের সংগে, ছবি তুলেছি রাজ্যের, দুপুরে দাওয়াত ছিলো আর এক ক্লোজ ফ্রেন্ডের বাসায়। এয়ারপোর্টে আমার সাথে গেলো আসাদ, চুয়েটের। খুব হেল্প করেছে শেষ পর্যন্ত। এয়ারপোর্ট থেকে ফোনে শেষবারের মত আবার কয়েকজনের সাথে কথা বলি, এরপর থাই এয়ারলাইন্সে চেপে বসি আমার বাংলাদেশের উদ্দেশ্য। এ ফিরে যাওয়া বড় আনন্দের, বড় আকাংখিত। দেশে প্রবেশ করলাম চট্টগ্রাম দিয়ে, নিচে তখন সিডর বিদ্ধস্ত গ্রাম আর আকাশে স্বর্নালী সুর্য।

কোরিয়ায় আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা বেশি হলেও সুখ স্মৃতিও অনেক।

দেশটা সুন্দর, সাধারন মানুষ গুলো হেল্পফুল। বিশেষ করে বুড়ো-বুড়িরা। বিদেশী ছাত্রদের খুব খাতির করতো এরা। কম দামে বেশি সব্জি দিয়ে দিতে বুড়ো সব্জিবিক্রেতা, অনেক সময় ফল-টল ফ্রী দিয়ে দিতো। ট্রেনে ভ্রমনের সময় সীটের অভাবে দাড়িয়ে আছি, বুড়ো কোন আজাস্সি (বিবাহিত/বয়স্ক লোক) এসে তার সাথে বয়স্কদের সীটে বসার জন্য জোরাজুরি করতো। বা সেই স্কুল টিচাররা- বাসা ম্যাম, কিম হিয়াং ম্যাম, মার্কোস, এরা নিজের গাড়ি দিয়ে উইকেন্ডে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইতো, গিয়েছি কয়েকবার। স্কুলের সেই চঞ্চল বাচ্চারা, এখনও যোগযোগ আছে ইমেইলে ওদের একজনের সাথে। কিংবা “বুসান বুদ্ধিজম” এর সদাহাস্যময় কিম মুন, বিভিন্ন ঐতিহাসিক-ধর্মীয়-দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ানোতে সেই অক্লান্ত সংগী বিদেশীদের। এদের কথা ভুলি কি করে? এদের কথা মনে পড়লে কোরিয়া আর এর মানুষদের খারাপ বলি কিভাবে। তবে ওভারঅল প্রবীন উচ্চ শিক্ষিত ও ইয়াং কোরিয়ান জেনেরেশন কম সহনশীল, নাক-উচু স্বভাবের। এদের কমনসেন্স কম। এবং এদের বোকা বানানোও তাই সহজ, কারন এরা নিজেদের খুব বুদ্ধিমান মনে করে। আবার ব্যতিক্রম আছে, ঐ একই ইউনির প্রফেসর ইয়াং জিন-কিম বা কাঙ হো ইয়াং, এরা ছিলো অসাধারন মানুষ, শ্রদ্ধা যেমন করতাম, তেমন স্নেহও পেয়েছি এদের কাছ থেকে।

বিদেশীদের মধ্যে সুজাতা দিদির দিদিসুলভ ভালোবাসা। নারিকেলের নাড়ু-বেগুনী-নুডলস-মুড়ি-চানাচুর-সেমাই-লাড্ডুর নিয়মিত সাপ্লাই, যেন স্বাদ ভুলে না যাই। বিদায়ের শেষ মুহুর্তে তার কান্না…..। ভোলা কঠিন। কিংবা কৃষ্ণা-কিরনের নিরন্তর সাহায্য-আতিথেয়তা, সব ধরে ধরে শিখানো। ওদের মেয়ে স্নেহার দুষ্টুমি।

ওখানেও হৃদয়ে ছোট্ট বাংলাদেশ নিয়ে ছোটাছুটি, বাংলাদেশিদের সাথে আড্ডা-পিকনিক-ইফতার পার্টি-ঈদ পার্টি। রাত জেগে শাবি’র শামীম (ব্লগেই আছেন), মুজিব এর সাথে আড্ডা আর মনোপলি খেলা ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত। কখনও সবার ছোটভাই চুয়েটের কফিল এসে যোগ দিতো। কখনও বা রাত ৯টার দিকে বের হয়ে পুল খেলা-রাস্তায় জুস নিয়ে হেটে হেটে আড্ডা। উইকেন্ডে দলবেধে মার্কেটে ঘোরাঘুরি, শামীম ভাইয়ের বিয়ের বাজার করা। হৈ-চৈ কৌতুক, একে ওকে পচানো। আর তাবলীগ আসাদের গার্জিয়ান ভাবটাও এনজয় করতাম। শাবি’র জগন্ময়-সেলিনা জুটির জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে ডালপুরী খাওয়ানো। অনেক দিন কচু খাইনা শুনে করিম ভাই-দীপ্তি ভাবীর দাওয়াত দিয়ে কচুর অনেক আইটেম খাওয়ানো। চাটগায়া আকবর ভাইয়ের “বদ্দা” সুলভ ভালোবাসা আর দাওয়াত খাওয়ানো……. এসব কিছুই আনন্দের….মিস করি খুব।

অনেক বড় হয়ে গেলো, তবুও মনে হয় আরও লেখার ছিলো, আরও বলার ছিলো। কিন্তু পাঠকের বিরক্তি আর না বাড়িয়ে শেষ করছি এখানেই। কোরিয়ায় থাকা পুরো সময়টার অনেক টুকরো স্মৃতি আছে, আনন্দের-কষ্টের। সুযোগ পেলে পরর্বতীতে লেখবো।

এতদিন সাথে থাকার জন্য সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

কোরিয়ায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষনাঃ আমার (তিক্ত) অভিজ্ঞতা (পর্ব-১০)

আমার কোর্স এন্ড রিসার্চ এক্টিভিটিস-তিক্ততার নতুন পর্ব শুরুঃ ৪র্থ কিস্তি

সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সিমেষ্টার শুরু হবে, এবার টিউশন ফি আমাকে দিতে হবে, যেহেতু স্কলারশীপ পেয়েছি। অথচ টাকা তখনও হাতে আসে নি। আবার যদি এই টাকা নিয়েও কোন সমস্যা করে তাই ইচ্ছা করেই হোসাংকে শুনিয়ে বলি “আমার স্কলারশীপের টাকা নিয়ে কোন সমস্যা করলে সোজা ফান্ডিং অথরীটিকে জানাবো”। এদিকে প্রফেসর ডেকে বলে দেয় কারও কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ফি টা দিয়ে দিতে। আমি রিস্ক নিলাম না, যা হাতে আসে নাই, বা যা নিয়ে এরা প্রব্লেম করতে পারে তার উপর ভরসা করে ১৫০০+ ডলার ধার নেয়া বোকার কাজ হবে। ঠেকে শিখেছি তাই বল্লাম, তুমিই দিয়ে দাও। আমি টাকা পেলে দিয়ে দেবো।

এদিকে আমাদের টিউশন ফি’র টাকা দিতে হবে এই অযুহাতে সুজাতা দিদিকে চাপ দিতে লাগলো নতুন একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলে অন্য একটা ফেলোশীপের টাকা আনার জন্য। অর্থ্যাৎ টাকা আসবে দিদির নামে, খরচ করবে ওরা, আর নাম হবে আমাদের টিউশন ফি। দিদি খুব সৎ আর নির্বিবাদী, তাই রাজী না। এই নিয়ে দিদির সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করলো। চেষ্টা করলো যেন আমি দিদির উপর ক্ষেপে যাই। আমরা এ ইস্যুটা এড়িয়ে গেলাম। দিদিকে সাপোর্ট দিয়ে গেলাম আমরা।

আমার টিউশন ফি আপাততঃ দিয়ে দিলো ল্যাব থেকে। সেকেন্ড সিমেস্টার শুরু হলো। যথারীতি ৩ টা কোর্স। প্রফেসরের একটা তো আছেই। আরো আছে “বায়োডিজাইন” আর “ক্যান্সার জেনেটিকস” এর দুটা কোর্স। ২য় সিমেস্টারে আমার প্রফেসর কোন ক্লাশ নেয় নি। বাকী দুটা ক্লাশ খুব এনজয়েবল ছিলো। কোর্স টিচাররাও খুব ভালো ছিলেন। সৎ আর সেনসিবল। তাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কও ভালো ছিলো। আমি ৪০০ ডলারে চলতাম শুনে অবাক হয়ে যেতো, আর বলতো, কিভাবে চলো? আমি হেসে এড়িয়ে যেতাম। প্রফেসরের দুর্নাম করে লাভ নেই। কোরিয়ানদের ফেলো ফিলিংস খুব বেশি, উল্টো ফেসে যেতে পারতাম কিছু বল্লে।

সেপ্টেম্বরের ফার্স্ট উইকে স্কলারশীপের কাগজপত্র চালাচালি শুরু হলো, আমার তখন পকেট গরের মাঠ। রোজার মাস শুরু হলো, এক বন্ধু হেল্প করলো খুব, না হলে রমজান মাসটা ফুল ফাস্টিং হয়ে যেতো। এর মধ্যে কোরিয়ান হারভেস্ট ফেস্টিভ্যাল বা থ্যান্কস গিভিং ডে’র ছুটি এসে পড়লো প্রায়। ছুটি শুরু হবার ঠিক আগে সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ দুই মাসের স্কলারশীপ একত্রে পেলাম, ১৮০০ ডলার। কোরিয়ায় যাওয়ার পর এই প্রথম নিজের একাউন্টে নিজের এত টাকা। সেদিনই সন্ধ্যায় প্রফেসর ইয়াংজে কে দিয়ে হিসাব পাঠালো, যেনো ১৫০০+ ডলার শোধ করে দেই। আমার হাতে থাকবে তাহলে ২৫০ডলারের মত। বলে দিলাম একেবারে সম্ভব না, ৬ মাসে কিস্তিতে দেবো। টাকা আমার হাতে রাজি না হয়ে কোথায় যাবে।

ছুটিটা ভালো কাটলো, মেয়ে-মেয়ের মা আর ভাগ্নির জন্য হাল্কা কিছু কেনাকাটা, আড্ডা আর ইফতার পার্টি দিয়ে ও খেয়ে।

এর মধ্যে আর একবার বাদানুবাদ হলো প্রফেসরের সাথে ফ্যামিলি আনা নিয়ে। আমি বলে দিলাম রাগের মাথায়, “তোমার কোন হেল্প লাগবে না আমার, ইভেন বন্ডের টাকাও আমি দেবো।” সে তখন বলে, “ওকে, তাহলে আমি জিনিসপত্র দিয়ে তোমাকে হেল্প করবো”। আমি আগ্রহ দেখালাম না, কারন হেল্পের নামে আবার কোন প্যাচ দেয় কে জানে! রোজার মাসটা ওখানেই পোস্টডক করা এক বন্ধুর সাথে একত্র খাওয়া-দাওয়া চল্লো। সে ঈদে বাড়ি যাবে, পারলে বিয়ে করে আসবে। অক্টোবরের ৯ তারিখে সে দেশে গেলো, আমার কাছে ওর বাসার চাবি। ১৩ তারিখে রমজানের ঈদ, পরিবারের সবাইকে ছাড়া প্রথম ঈদ। শনিবার ছিলো, ল্যাবে প্রফেসরের সাথে ডিসকাশন ছিলো, শুক্রবার রাতে বলে আসলাম, কাল আমার ফেস্টিভাল, আমি আসতে পারবো না। উত্তর এলো, “ওকে, ওকে!”। নামাজ পড়ে সারা সকাল ঘুরলাম জুনিয়র দুই ফ্রেন্ড এর সাথে। দুপুর ল্যাম্ব রান্না করলাম, সন্ধ্যায় সব বাংগালী মিলে বড় ঈদের পার্টি দিলাম।

ডঃ গোহ এর সাথে আমার প্রজেক্ট বাতিল করা হলো, আমি কৃষ্ণার সাথে কাজ করি। নিজের প্রজেক্ট শুরু করতে দেয়া হচ্ছে না। ১-১.৫ বছর না গেলে নাকি ওটা নিয়ে কিছুই করতে দেবে না, অথচ প্রতি বছর প্রগ্রেস রিপোর্ট দিতে হবে। হোসাংকে জিজ্ঞেস করলাম এ ব্যাপারে। বললো, হয়ে যাবে। অর্থ্যাৎ ওরা চাইলে সব রিপোর্টই যাবে। কাজের দরকার নেই।

প্রফেসরের সাথে আমার তখন সম্পর্ক খুব খারাপ। টাইমশীটে টাইম লিখি না, মিটিং এ কোন না কোন অযুহাতে পারতপক্ষে প্রেজেন্ট করি না, মান্থলী রিপোর্ট দায়সারা ভাবে দেই। ইচ্ছে করেই করি। কারন এসব কিছুর ব্যতয় ঘটলে স্যালারী কাটার হুমকি ছিলো, এখন সে স্যালারীতো সে দেয় না, তাই কাটার সুযোগ নেই, সেটাই তাকে মনে করিয়ে দেই। আবার বাসা বদলের ধোয়া তুলে দেই, দেখতেও থাকি একটা দুইটা বাসা। এখানেও প্রফেসর লাচার, স্যালারী দেয় না, সো বাসা ভাড়া কাটার সুযোগও নেই। এই খারাপ সম্পর্কটা উন্নয়নের ট্রাই চললো অনেক। যেমন, পুরাতন একটা ৪০% কমপ্লিট প্রজেক্ট আবার হিমঘর থেকে তুলে এনে কৃষ্ণাকে বললো আমাকে নিয়ে কাজ শুরু করতে। এটাতে আমাদের দু’জনকে ইক্যুয়াল কন্ট্রিবিউশনে অথর করা হবে। কৃষ্ণাকে বলে, “মেক হিম হ্যাপি”। আমাকে খুশি করতে বলে পাবলিকেশন দিয়ে, কিন্তু কৃষ্ণা নিজেও সন্দিহান এটা আবার কোন জোচ্চুরি না তো?

আবার একদিন আরেক ধান্দাবাজির চেষ্টা করলো। আমাকে বললো ,”নেক্সট সিমেষ্টারেও তো তোমার টিউশন ফি লাগবে, তাই এখন থেকে কিছু টাকা আমার কাছে জমা রাখো। যখন দরকার হবে তখন দিয়ে দিবো”। আমি একটু বাজিয়ে দেখি, বলি, কত জমা রাখবো? তার উত্তর, “৫০০”। আমি প্রতি মাসে তাকে টিউশনের ধার শোধ করি ২৫০+, তখন ৫০০ দিলে আমার কাছে থাকবে ১৫০ ডলারেরও কম! এই টাকায় আমি চলবো কিভাবে! এটা জিজ্ঞেস করলাম। বল্লো, “চেস্টা করো”। আমি কিছু না বলে চলে এলাম। মাসের ২০ তারিখের মধ্যে স্কলারশীপের টাকা আসে। আমি ২২ তারিখে ব্যান্ক ট্রান্সফার করলাম আগের হিসেবে কিস্তির টাকা। এক্সট্রা ৫০০ ডলার না। পরের দিনই আমাকে ডেকে প্রফেসর বল্লো, তোমার না ৫০০ ডলার জমা দেয়ার কথা?” আমি উত্তর দিলাম, জমা তো করেছি, তবে আমার একাউন্টে। সে শুধু বল্লো, “ওকে! ওকে!”। আমার টাকা তার কাছে জমা রাখলে আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে। সেই ঝামেলায় গেলাম না।

অক্টোবরের ২৬ তারিখ, শুক্রবার। সকাল বেলা কি কারনে যেনো তাড়াতাড়ি ল্যাবে চলে এসেছি। তাড়াতাড়ি মানে ৮.০০টার দিকে। ল্যাবে তখন সুজাতাদিদি আর হোসাং। তখন ল্যাব ডরমেটরিতে রাতে সবসময় থাকি না, দেশে ঈদ আর বিয়ের জন্য যাওয়া বন্ধুর বাসা ল্যাবের খুব কাছে, ওখানেই অনেক সময় রাতটা কাটাই। সকালে ব্রোকলি দিয়ে চিকেন রেধে এসেছি। মনটা ভালো তাই। ইমেইল চেক করতে গেলাম। ইনবক্সে একটা আনরিড মেইল। সাবজেক্ট নেই, স্প্যাম টাইপের কিছু হবে মনে করেও ওপেন করি। আর থমকে যাই!

মেইলে স্পষ্ট লেখা আমি UWA-তে IPRS স্কলারশীপ পেয়েছি! বিশ্বাস করতেও ভয় হচ্ছিলো, ৯ মাসের কষ্টে পার করা দিন গুলো আত্মবিশ্বাস শেষ করে দিয়েছে। আমি খুশিতে বাংলায় চিৎকার করে উঠলাম, “দিদি, আমার স্কলারশীপ হয়ে গেছে!”।

সুখের দিন কি তাহলে শুরু হলো!

চলবে………

Friday, January 2, 2009

কোরিয়ায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষনাঃ আমার (তিক্ত) অভিজ্ঞতা (পর্ব-৯)

আমার কোর্স এন্ড রিসার্চ এক্টিভিটিস-তিক্ততার নতুন পর্ব শুরুঃ ৩য় কিস্তি

মনে রাগ নিয়ে দেশে ফিরলাম। ২৮ জুন রাতে ঢাকায়। কষ্টগুলো কাউকে বল্লাম না, গেছি লেখাপড়া করতে, এত কষ্ট করেছি বলি কিভাবে? সময়ও হাতে বেশি নেই, জুলাইয়ের ১৫ তারিখে ফিরতে হবে আবার। বাসার সবার হাসি-খুশি মুখ- আমার ফেরার আনন্দ, আমাদের অনাগত সন্তান আর আমার ভাইয়ের বিয়ে, আনন্দের কত উপলক্ষ্য! আমি সব ভুলে আনন্দে সামিল হই। বউকে ডাক্তারের কাছে নেয়া-আল্ট্রাসোনো, ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া-হইচই-আমি ছাড়া বিয়ের গেট ধরবে কে? মাঝে একবার ঘুরে এলাম কর্মস্থলে, ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়ে এলাম কোরিয়ায় কিছু সমস্যার কথা, যেন ভবিষ্যতে সহায়তা পাই।

ঝড়ের বেগে আনন্দের দিন গুলো শেষ হতে থাকে, কৃষ্ণার ইমেইল পাই “আনেকা টাইম তো হো গেয়া ব্রো..”। প্রফেসরেরও একটা ইমেইল পাই, তবে সেটা অন্য বিষয়ে, সব ল্যাব মেম্বারদের জন্য গণমেইল। আবার ফিরে যাওয়া কষ্টের জীবনে, যেখানে শুধু একটাই আশা, স্কলারশীপ! ফিরে গেলাম কোরিয়ায়, পৌছালাম ১৫ জুলাই। নিজের বাসায় না ফিরে ইউনির কাছেই থাকা দেশি দু’বন্ধুর বাসায় উঠে রাতটা কাটালাম, সবাই মিলে দেশ থেকে আনা খাবার-দাবার সাবাড় করলাম, আনন্দকে একটু দীর্ঘায়িত করা আর কি!

পরদিন, ১৬ জুলাই ছিলো সোমবার, তবে কোন কারনে ছুটি ছিলো। ল্যাবে গেলাম দুপুরের দিকে, সবাই নেই। কৃষ্ণা-কিরন-দিদি। আর প্রফেসর ও তার চ্যালা হোসাং। আমাকে দেখে প্রথম ৩জন তো খুশিই, তবে আমাকে অবাক করে প্রফেসর আর হোসাংও খুব খুশি। প্রফেসর বলে “ওয়েলকাম ব্যাক!”, হোসাং বলে “কেমন কাটলো, সবাই কেমন….।” আমি কিছুটা বিভ্রান্ত। তবে তারা মনে করেছিলো আমি নাকি আর ফিরবো না, তাই ফিরতে দেখে হাপ ছেড়ে বাচলো।

আগের পর্বে একটা তথ্য দিতে ভুলে গেছি। এপ্রিল মাসে প্রফেসর একটা বড় প্রজেক্ট হারিয়েছে। বাজেট আর লেন্থ দু’দিকেই বড়। ২০১২ পর্যন্ত ছিলো, কিন্তু আগের ৫ বছরের প্রগ্রেস ভালো না হওয়ায় আর এক্সটেন্ড করে নি। এটা ল্যাবের জন্য একটা বিশাল ধাক্কা। কারন এই প্রজেক্টের টাকা দিয়ে ল্যাবের অনেক খরচ চালানো হত। আসলে আগের ৫ বছরে ল্যাবের উল্লেখযোগ্য কোন ভালো পাবলিকেশন নেই। তাই এটাই স্বাভাবিক। আমি দেশে থাকতে প্রফেসরের যে মেইল পেয়েছি সবার সাথে, সেটা ছিলো “সবার জন্য করনীয়” টাইপের। সেখানে সব ল্যাব মেম্বারকে আরো সিরিয়াস ও রেগুলার হতে বলা হয়েছিলো, এবং না হলে স্যালারি আরো কমিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিলো। বিশেষ করে ২জন রিসার্চ প্রফেসর ও ২ জন পোষ্টডক-কে স্যাক্রিফাইসের জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছিলো। কি ধরনের স্যাক্রিফাইস তা গিয়ে টের পেলাম।

প্রফেসর ঐ ৪জন, হোসাং আর কৃষ্ণাকে নিয়ে মিটিং করলো, কৃষ্ণাকে নেয়ার কারন সে ল্যাব এক্টিভিটিস এর লিডার, আর সে দিদিকে কনভিনস করতে পারবে। মিটিং ঐ ৪ জনকে ৫০০ ডলার করে দিতে বলা হলো প্রতি মাসে, ল্যাবের জন্য। ডঃ ইসমাইলের ভিন্ন ইকুয়েশন আছে, সে রাজি। দিদি “না” বল্লো, তাকে ডবল ফেলোশীপের লোভ দেখানো হলো, সে বলে দিলো সে বেশি চায় না, যা আছে তা নিয়েই শেষ করতে চায়। ডঃ প্রকাশ ষ্ট্রংলি “না”, আর বাসু প্রথমে “হ্যা”, পরে আসল জিনিসটা বুঝতে পেরে “না”। শেষোক্ত তিন জনের “না” তে জমে উঠলো খেলা। কারন প্রফেসর “না” শোনার আশা করেনি। সে ভয়ানক ক্রুদ্ধ! বিদেশীরা বেশি টাকা নেবে আর তাকে কষ্ট করে আরো ফান্ডিং খুজতে হবে, কিভাবে হয়! এর মাঝে আমি যদি স্কলারশীপ পাই, তবে ল্যাবে এক্সট্রা টাকা আসবে, আমার ফিরে আসায় খুশি আসলে এজন্যই।

ইউনিতে তখন সামার ভ্যাকেশন, ক্লাস শুরু হবে সেপ্টেম্বর থেকে। ল্যাবে তখন ঢিলেঢালা অবস্থা। প্রজেক্ট হারিয়ে প্রফেসর একটু ল্যাবে অমনোযোগী, এই সুযোগে সবার আনন্দ। যেনো কোন প্রাইমারী স্কুলের ক্লাশরুম। মাষ্টার থাকলেই সব ঠিক, না থাকলেই হইচই। আমিও রিল্যাক্স। দেশিদের সাথে রাত জেগে মনোপলি, সময় করে বিলিয়ার্ড খেলতে যাওয়া-ইউনির মেইন গেটে আড্ডা মারা আর উইকেন্ডে বড় মার্কেটগুলোতে ঘুরাঘুরি। একজন আবার পিএইচডি শেষ করে দেশে বিয়ে করতে যাবে, সেখান থেকে অষ্ট্রেলিয়া, তার জন্য কেনাকাটা সবাই মিলে।

ওদিকে সুওনে থাকা আমার বন্ধুর অবস্থা খুব খারাপ, ল্যাবমেটদের সাথে প্রতিনিয়ত ঝামেলা, বাইরে এমনকি বাথরুমে যেতে হলেও ল্যাবলিডারকে (ওরা বলতো ক্যাপ্টেন!) বলে যেতে হবে, কেউ দেখা করতে আসতে পারবে না… ইত্যাদি। সে লুকিয়ে দেশে চলে যাবে জুলাইয়ের ২৫ তারিখ, আমি বলি আর একটু দেখ! স্কলারশীপের রেজাল্ট হলো বলে!

অবশেষে স্কলারশীপের রেজাল্ট হলো জুলাইয়ের ২৪ তারিখে। আমি স্কলারশীপ পেয়েছি, আমার বন্ধুও। সে আর দেশে ফিরে যাবে না, তার প্রফেসরের সাথে কথা হয়েছে। আমার কথা তো আগেই হয়ে আছে, স্কলারশীপ পেলে আমার টিউশন ফি দিয়ে দিবে, পুরোটা আমার। কৃষ্ণাও মনে করে যে দিবে। কারন আগে এক পাকিস্তানী ছাত্র ল্যাব থেকে না বলে চলে গেছে এই নিয়ে গ্যান্জাম করায়। সো, আমার বেলা ভুল করবে না।

স্কলারশীপের খবরটা বগলদাবা করে প্রফেসরের কাছে যাই, খুশির খবর দেবো, আর তার সাথে মনে করিয়ে দেবো এগ্রিমেন্ট এর কথা। জানালাম, সে দাত বের করে হাসি দিলো, “ওকে! ওকে!”। আমি বল্লাম টিউশন ফি’র কথা। সে নির্বিকারভাবে বলে দিলো “দেয়া সম্ভব না, কারন তাতে তুমি অন্যান্য স্টুডেন্টদের চেয়া অনেক বেশি পাবে, একি ল্যাবে এটা ঠিক না। তাহলে ওদের স্যালারীও বাড়াতে হবে।” আমার প্রচন্ড রাগ উঠলো, এটার জন্য এতদিনের প্রতীক্ষা, আর সে বলে কি?

আমি তখন মরিয়া, বলি “তুমি তো জেনেই এই কথা দিয়েছো, এখন কেনো এ কথা বলছো?” নির্লজ্জের মত সে বলে চল্লো, “তুমি যদি একজন পোষ্টডকের কাজ গুলি করো, তাহলে আমি তোমাকে এক্সট্রা পে করবো”, এটা আমাকে দুর্বল করে দেয়ার চেষ্টা। অথচ আমি একজন পিএইচডি স্টুডেন্ট হয়ে পোষ্টডকের কাজগুলো করবো কিভাবে? আমি বুঝলাম সে এলোপাথাড়ি যাচ্ছে, নিজের ভুল স্বীকার না করে, টিউশন ফি না দেয়ার জন্য একের পর এক উল্টাপাল্টা যুক্তি দেখাবে। আমি নিজের মধ্যে দুর্বিনীত রাগ টের পাই, বলি, “তাহলে তো সমস্যা। কারন ফ্যামিলি ছাড়া আমার পক্ষে থাকা আর কাজে কনসেন্ট্রেট করা সম্ভব না, আর এইটাকায় ফ্যামিলি নিয়ে থাকাও সম্ভব না”। সে সমাধান দিলো,”তোমার ১ সিমেস্টার শেষ, আরো ৩টা শেষ করে ফ্যামিলি আনো, তখন টিউশন ফি লাগবে না, পুরোটাই কাজে লাগবে তোমার।” আরো ৩ সিমেস্টার মানে আরো ১ বছর ৬ মাস! বলে কি!

সে টোপ দেয়, “তুমি যখন ফ্যামিলি আনবে তখন আমি আরো হেল্প করবো, আর এখন ভালো কিছু পেপার করো, আমি ইনসেনটিভ দিবো”। এতদিনের দেখা স্বপ্নগুলো ভেংগে চুরমার, স্কলারশীপ পেয়েও লাভ হলো না? তবে ভালো দিন আসবে কবে? আর তো বিশ্বাস করা যায় না। প্রফেসর ভবিষ্যতে আমার জন্য আর কি কি করবে তার ফিরিস্তি দিয়ে যাচ্ছে, দিয়ে যাচ্ছে আশ্বাসের বানী। আমি রাগে কাপতে কাপতে চলে আসলাম তার সামনে থেকে। সে ক্ষেপে গিয়ে পেছন থেকে ডাকছে, আমি শুনলাম না। আবার সেই প্রথমদিককার মত সাহস ফিরে পাচ্ছিলাম।

পরবর্তি কয়েকটা দিন খুব দ্রুত কিছু ডিসিশন নিলাম, সুজাতাদিদি আর দেশি বন্ধুরা হেল্প করলো ডিসিশন নিতে। অন্যান্য দেশে স্কলারশীপের জন্য এ্যাপ্লি করবো। ডরমেটরিতে ইন্টারনেট লাইন আছে, আর ওখান থেকে ইয়াংতে চলে গেছে নতুন বাসা নিয়ে, সো আমিই একা নীচতলায়। ইয়াংতে কম্পিউটার এর পার্ট-টাইম ব্যবসাও করে, খুব কম দামে ওর কাছ থেকে একটা সিপিইউ কিনলাম, ৮০ ডলারে। মনিটর, কি বোর্ড, মাউস, স্পিকার যোগাড় হয়ে গেলো। সিভি টা আরেকটু মেরামত করে আকর্ষনীয় করা হলো, অষ্ট্রেলিয়ায় যে চলে যাবে, সে হেল্প করলো ওটা করতে।

আমি ফাকি দেয়া শুরু করলাম ল্যাবে, সকালে ল্যাবে এসে আবার বের হয়ে চলে যাই বাসায়। ইমেইল করা শুরু করলাম রিলেটেড লাইনের প্রফেসরদের। ল্যাব থেকে করলে ধরা খেতে পারি, তাই। টাইমশীটে আমি ল্যাবে আসার টাইম লিখিনা, ল্যাব মিটিং এ কোন কিছু প্রেজেন্ট করি না, নানা অযুহাতে এড়িয়ে যাই। কোন প্রজেক্টের কাজ করি না, কৃষ্ণার সাথের প্রজেক্টগুলো ছাড়া। মান্থলী রিপোর্ট জমা দেই না জুলাইয়ের। প্রফেসরকে দেখাই আমার রাগ-বিদ্রোহ, যেহেতু দোষটা তার, তাই কিছু বলে না, দেখেও না দেখার ভান করে।

আমি এই সুযোগে নিজের কাজ করে যাই। অষ্ট্রেলিয়া থেকে রেসপন্স পাই। ইউনভারসিটি অব এ্যাডিলেড আর ইউনিভারসিটি অব ওয়েস্টার্ন অষ্ট্রেলিয়া (UWA) থেকে , এ্যাডিলেডে এ্যাপ্লাইয়ের জন্য হাতে খুব কম সময় ছিলো, করা হয় না। UWA-তে IPRS স্কলারশীপের আবেদন করতে হবে অগাষ্টের ১৫ তারিখের মধ্যে। খুব দ্রুত ব্রিফ একটা প্রোপোজাল লিখে পাঠাই, ওখানে থেকে গ্রীন সিগন্যাল আসে, “গো এ্যাহেড!”। অনলাইনে এ্যাপ্লাই করি, ডকুমেন্টস পোষ্টে পাঠাই। ইউনিভারসিটি অব ওলংগাং থেকে আর একটা রেসপন্স পাই, ওটার এ্যাপ্লাই করতে অনেক সময় পাবো, অক্টোবরের ৩১ তারিখ, দেখা যাবে বলে আপাতত রেখে দেই।

আমার এসব কাজ দেখে সুজাতাদিদি আর কৃষ্ণাদা ভয় পায়, বলে, সাবধান, ল্যাবে সময় দাও, এত বেপোরোয়া হয়ো না। আমি আবার থিতু হই, ল্যাবে আগের মত আসতে থাকি, তবে ল্যাব মিটিং এ ফাকি দেয়া চলতে থাকে। কৃষ্ণার চাপাচাপিতে প্রজেক্টের কাজ শুরু করি, সে বুঝায় “তোমার অন্য দেশে স্কলারশীপ হবেই তা ভাবছো কেন? কাজ করতে থাকো এখানে, হলে চলে যাবে, না হলে এই সময়টা যেন নষ্ট না হয় সেটা দেখো”। কথা ঠিক! কাজ শুরু করি।

এদিকে স্কলারশীপ পেয়েছি বলে ল্যাব থেকে স্যালারী বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, অথচ স্কলারশীপের টাকা পাওয়ার কোন নামগন্ধও নেই। তাই অগাষ্টে টাকা নেই। মান্থলী রিপোর্ট দেই নি, তাই জুলাইয়ের বেতন দিবেনা, আমার অবস্থা তো খারাপ। প্রফেসর আমাকে এভাবেই শায়েস্তা করবে মনে হচ্ছে। কিন্তু বল হঠাৎ আমার কোর্টে, আগের মত ভুল করে হঠাৎ কিছু টাকা আমার একাউন্টে জমা হলো, যথারীতি বলা হলো টাকাটা তুলে দিতে। আমি আর নড়িচড়ি না, গড়িমসি করি, বলি টাকা নেই, খরচ করে ফেলেছি। ওরা অক্ষম রাগে কাঁপে। বাধ্য হয়ে ওটাকেই আমার স্যালারী হিসেবে দেয়া হলো। সেবার মান্থলী রিপোর্ট ছাড়াই আমার স্যালারি হলো। ল্যাব রুলকে বৃদ্ধাংগুলি প্রর্দশন, ল্যাবমেম্বারদের কাছে আমি স্রেফ হিরো, হোসাং বাদে।

অগাষ্টের ২৭ তারিখে একটা বিশাল সুখবর পেলাম, জীবনের সবচে আনন্দের খবর, আমি মেয়ের বাবা হয়েছি। আবেগে আপ্লুত হই, আনন্দে ভাসি, না থাকতে পারার কষ্টে জেরবার হই, চোখের পানি মুছে কয়েক টিন রসগোল্লা কিনে দেশি সবাইকে নিয়ে উল্লাস করি। আমার বাবা বলে দেশ থেকে, “তোমার সুদিন আসছে! প্রথমে মেয়ে হয়েছে, সৌভাগ্য আসবেই”। আমি আশায় বুক বাঁধি।

চলবে………..।

শেখ হাসিনা একি বললেন? আমি হতাশ হয়ে যাচ্ছি…….

আজ নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা নিজ বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। আল-জাজিরার সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন দুর্নীতি ও পাওয়ার এ্যাবুজের ব্যাপারে তাদের অবস্থান কি?

যথারীতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের কঠোর অবস্থানের কথা ব্যক্ত করলেন তিনি। এটাই স্বাভাবিক ও এক্সপেকটেড। কিন্তু এর পরপরই সেই হতাশাজনক ও একঘেয়েমী রেকর্ড বাজানো শুরু। উনি বল্লেন যে, তার আগের আমল (৯৬-২০০১) নাকি ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচে ভালো সময়, এককথায় গোল্ডেন টাইম। ঐ সময় নাকি কোন পাওয়ার এ্যাবুজ হয় নি। হায়রে!

আমরা হাজারী-ওসমান-তাহেরদের কথা ভুলিনি! ভুলিনি গণভবন নিজ নামে লেখে নেয়ার কথা। জুয়েল-দিপুর সন্ত্রাস! বলতে থাকলে আরও বলতে হবে….।

শেখ হাসিনা, যদি মনে করেন আপনি অতীতে কোন ভুল করেন নি, বা আপনার নেতা-কর্মীরা কোন ভুল করেননি, কোন পাওয়ার এ্যাবুজ করেননি, তবে এমন ওমন কি আরও করবেন?

ভুলগুলো যদি ভুলই মনে না হয় তবে সেটার রিপিটেশন অবশ্যম্ভাবী।

আপনার ১০০ দিনের কোন প্ল্যান নেই, না থাক। তবে যুদ্ধপরাধীদের বিচাররে ব্যাপারেও কোন প্ল্যান নেই…. তরুন এক সাংবাদিক ও প্রবীন সাংবাদিক এবিএম মুসার প্রশ্ন ছিলো এ ব্যাপারে। তরুন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে “অলরেডি বিচার হয়ে গেছে” “অবশ্যই বিচার হবে” বলে কৌশলে এড়িয়ে গেলেন উনি। আশা করেছিলাম এবিএম মুসার প্রশ্নের উত্তর দিবেন পরিস্কারভাবে। উনি এবারও পরিস্কার ভাবেই এড়িয়ে গেলেন।

আমি হতাশ। সেই চাতুর্যপুর্ন কথা-বার্তা। সেই এড়িয়ে যাওয়া।

নিজেদের ভুল স্বীকার না করা।
যুদ্ধপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে পরিস্কার কথা না বলা।

আমি হতাশ!
ভাবী প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধপরাধীদের বিচার না করলে আমরা ছাড়বো না।
তরুনরা অনেক আশা করে আপনাকে ক্ষমতায় এনেছে।
তারুন্যের শক্তিকে অবজ্ঞা করবেন না।
ভস্ম হয়ে যাবেন।