প্রিয় উক্তি......

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়..........

Saturday, January 3, 2009

কোরিয়ায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষনাঃ আমার (তিক্ত) অভিজ্ঞতা (পর্ব-১০)

আমার কোর্স এন্ড রিসার্চ এক্টিভিটিস-তিক্ততার নতুন পর্ব শুরুঃ ৪র্থ কিস্তি

সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সিমেষ্টার শুরু হবে, এবার টিউশন ফি আমাকে দিতে হবে, যেহেতু স্কলারশীপ পেয়েছি। অথচ টাকা তখনও হাতে আসে নি। আবার যদি এই টাকা নিয়েও কোন সমস্যা করে তাই ইচ্ছা করেই হোসাংকে শুনিয়ে বলি “আমার স্কলারশীপের টাকা নিয়ে কোন সমস্যা করলে সোজা ফান্ডিং অথরীটিকে জানাবো”। এদিকে প্রফেসর ডেকে বলে দেয় কারও কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ফি টা দিয়ে দিতে। আমি রিস্ক নিলাম না, যা হাতে আসে নাই, বা যা নিয়ে এরা প্রব্লেম করতে পারে তার উপর ভরসা করে ১৫০০+ ডলার ধার নেয়া বোকার কাজ হবে। ঠেকে শিখেছি তাই বল্লাম, তুমিই দিয়ে দাও। আমি টাকা পেলে দিয়ে দেবো।

এদিকে আমাদের টিউশন ফি’র টাকা দিতে হবে এই অযুহাতে সুজাতা দিদিকে চাপ দিতে লাগলো নতুন একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলে অন্য একটা ফেলোশীপের টাকা আনার জন্য। অর্থ্যাৎ টাকা আসবে দিদির নামে, খরচ করবে ওরা, আর নাম হবে আমাদের টিউশন ফি। দিদি খুব সৎ আর নির্বিবাদী, তাই রাজী না। এই নিয়ে দিদির সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করলো। চেষ্টা করলো যেন আমি দিদির উপর ক্ষেপে যাই। আমরা এ ইস্যুটা এড়িয়ে গেলাম। দিদিকে সাপোর্ট দিয়ে গেলাম আমরা।

আমার টিউশন ফি আপাততঃ দিয়ে দিলো ল্যাব থেকে। সেকেন্ড সিমেস্টার শুরু হলো। যথারীতি ৩ টা কোর্স। প্রফেসরের একটা তো আছেই। আরো আছে “বায়োডিজাইন” আর “ক্যান্সার জেনেটিকস” এর দুটা কোর্স। ২য় সিমেস্টারে আমার প্রফেসর কোন ক্লাশ নেয় নি। বাকী দুটা ক্লাশ খুব এনজয়েবল ছিলো। কোর্স টিচাররাও খুব ভালো ছিলেন। সৎ আর সেনসিবল। তাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কও ভালো ছিলো। আমি ৪০০ ডলারে চলতাম শুনে অবাক হয়ে যেতো, আর বলতো, কিভাবে চলো? আমি হেসে এড়িয়ে যেতাম। প্রফেসরের দুর্নাম করে লাভ নেই। কোরিয়ানদের ফেলো ফিলিংস খুব বেশি, উল্টো ফেসে যেতে পারতাম কিছু বল্লে।

সেপ্টেম্বরের ফার্স্ট উইকে স্কলারশীপের কাগজপত্র চালাচালি শুরু হলো, আমার তখন পকেট গরের মাঠ। রোজার মাস শুরু হলো, এক বন্ধু হেল্প করলো খুব, না হলে রমজান মাসটা ফুল ফাস্টিং হয়ে যেতো। এর মধ্যে কোরিয়ান হারভেস্ট ফেস্টিভ্যাল বা থ্যান্কস গিভিং ডে’র ছুটি এসে পড়লো প্রায়। ছুটি শুরু হবার ঠিক আগে সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ দুই মাসের স্কলারশীপ একত্রে পেলাম, ১৮০০ ডলার। কোরিয়ায় যাওয়ার পর এই প্রথম নিজের একাউন্টে নিজের এত টাকা। সেদিনই সন্ধ্যায় প্রফেসর ইয়াংজে কে দিয়ে হিসাব পাঠালো, যেনো ১৫০০+ ডলার শোধ করে দেই। আমার হাতে থাকবে তাহলে ২৫০ডলারের মত। বলে দিলাম একেবারে সম্ভব না, ৬ মাসে কিস্তিতে দেবো। টাকা আমার হাতে রাজি না হয়ে কোথায় যাবে।

ছুটিটা ভালো কাটলো, মেয়ে-মেয়ের মা আর ভাগ্নির জন্য হাল্কা কিছু কেনাকাটা, আড্ডা আর ইফতার পার্টি দিয়ে ও খেয়ে।

এর মধ্যে আর একবার বাদানুবাদ হলো প্রফেসরের সাথে ফ্যামিলি আনা নিয়ে। আমি বলে দিলাম রাগের মাথায়, “তোমার কোন হেল্প লাগবে না আমার, ইভেন বন্ডের টাকাও আমি দেবো।” সে তখন বলে, “ওকে, তাহলে আমি জিনিসপত্র দিয়ে তোমাকে হেল্প করবো”। আমি আগ্রহ দেখালাম না, কারন হেল্পের নামে আবার কোন প্যাচ দেয় কে জানে! রোজার মাসটা ওখানেই পোস্টডক করা এক বন্ধুর সাথে একত্র খাওয়া-দাওয়া চল্লো। সে ঈদে বাড়ি যাবে, পারলে বিয়ে করে আসবে। অক্টোবরের ৯ তারিখে সে দেশে গেলো, আমার কাছে ওর বাসার চাবি। ১৩ তারিখে রমজানের ঈদ, পরিবারের সবাইকে ছাড়া প্রথম ঈদ। শনিবার ছিলো, ল্যাবে প্রফেসরের সাথে ডিসকাশন ছিলো, শুক্রবার রাতে বলে আসলাম, কাল আমার ফেস্টিভাল, আমি আসতে পারবো না। উত্তর এলো, “ওকে, ওকে!”। নামাজ পড়ে সারা সকাল ঘুরলাম জুনিয়র দুই ফ্রেন্ড এর সাথে। দুপুর ল্যাম্ব রান্না করলাম, সন্ধ্যায় সব বাংগালী মিলে বড় ঈদের পার্টি দিলাম।

ডঃ গোহ এর সাথে আমার প্রজেক্ট বাতিল করা হলো, আমি কৃষ্ণার সাথে কাজ করি। নিজের প্রজেক্ট শুরু করতে দেয়া হচ্ছে না। ১-১.৫ বছর না গেলে নাকি ওটা নিয়ে কিছুই করতে দেবে না, অথচ প্রতি বছর প্রগ্রেস রিপোর্ট দিতে হবে। হোসাংকে জিজ্ঞেস করলাম এ ব্যাপারে। বললো, হয়ে যাবে। অর্থ্যাৎ ওরা চাইলে সব রিপোর্টই যাবে। কাজের দরকার নেই।

প্রফেসরের সাথে আমার তখন সম্পর্ক খুব খারাপ। টাইমশীটে টাইম লিখি না, মিটিং এ কোন না কোন অযুহাতে পারতপক্ষে প্রেজেন্ট করি না, মান্থলী রিপোর্ট দায়সারা ভাবে দেই। ইচ্ছে করেই করি। কারন এসব কিছুর ব্যতয় ঘটলে স্যালারী কাটার হুমকি ছিলো, এখন সে স্যালারীতো সে দেয় না, তাই কাটার সুযোগ নেই, সেটাই তাকে মনে করিয়ে দেই। আবার বাসা বদলের ধোয়া তুলে দেই, দেখতেও থাকি একটা দুইটা বাসা। এখানেও প্রফেসর লাচার, স্যালারী দেয় না, সো বাসা ভাড়া কাটার সুযোগও নেই। এই খারাপ সম্পর্কটা উন্নয়নের ট্রাই চললো অনেক। যেমন, পুরাতন একটা ৪০% কমপ্লিট প্রজেক্ট আবার হিমঘর থেকে তুলে এনে কৃষ্ণাকে বললো আমাকে নিয়ে কাজ শুরু করতে। এটাতে আমাদের দু’জনকে ইক্যুয়াল কন্ট্রিবিউশনে অথর করা হবে। কৃষ্ণাকে বলে, “মেক হিম হ্যাপি”। আমাকে খুশি করতে বলে পাবলিকেশন দিয়ে, কিন্তু কৃষ্ণা নিজেও সন্দিহান এটা আবার কোন জোচ্চুরি না তো?

আবার একদিন আরেক ধান্দাবাজির চেষ্টা করলো। আমাকে বললো ,”নেক্সট সিমেষ্টারেও তো তোমার টিউশন ফি লাগবে, তাই এখন থেকে কিছু টাকা আমার কাছে জমা রাখো। যখন দরকার হবে তখন দিয়ে দিবো”। আমি একটু বাজিয়ে দেখি, বলি, কত জমা রাখবো? তার উত্তর, “৫০০”। আমি প্রতি মাসে তাকে টিউশনের ধার শোধ করি ২৫০+, তখন ৫০০ দিলে আমার কাছে থাকবে ১৫০ ডলারেরও কম! এই টাকায় আমি চলবো কিভাবে! এটা জিজ্ঞেস করলাম। বল্লো, “চেস্টা করো”। আমি কিছু না বলে চলে এলাম। মাসের ২০ তারিখের মধ্যে স্কলারশীপের টাকা আসে। আমি ২২ তারিখে ব্যান্ক ট্রান্সফার করলাম আগের হিসেবে কিস্তির টাকা। এক্সট্রা ৫০০ ডলার না। পরের দিনই আমাকে ডেকে প্রফেসর বল্লো, তোমার না ৫০০ ডলার জমা দেয়ার কথা?” আমি উত্তর দিলাম, জমা তো করেছি, তবে আমার একাউন্টে। সে শুধু বল্লো, “ওকে! ওকে!”। আমার টাকা তার কাছে জমা রাখলে আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে। সেই ঝামেলায় গেলাম না।

অক্টোবরের ২৬ তারিখ, শুক্রবার। সকাল বেলা কি কারনে যেনো তাড়াতাড়ি ল্যাবে চলে এসেছি। তাড়াতাড়ি মানে ৮.০০টার দিকে। ল্যাবে তখন সুজাতাদিদি আর হোসাং। তখন ল্যাব ডরমেটরিতে রাতে সবসময় থাকি না, দেশে ঈদ আর বিয়ের জন্য যাওয়া বন্ধুর বাসা ল্যাবের খুব কাছে, ওখানেই অনেক সময় রাতটা কাটাই। সকালে ব্রোকলি দিয়ে চিকেন রেধে এসেছি। মনটা ভালো তাই। ইমেইল চেক করতে গেলাম। ইনবক্সে একটা আনরিড মেইল। সাবজেক্ট নেই, স্প্যাম টাইপের কিছু হবে মনে করেও ওপেন করি। আর থমকে যাই!

মেইলে স্পষ্ট লেখা আমি UWA-তে IPRS স্কলারশীপ পেয়েছি! বিশ্বাস করতেও ভয় হচ্ছিলো, ৯ মাসের কষ্টে পার করা দিন গুলো আত্মবিশ্বাস শেষ করে দিয়েছে। আমি খুশিতে বাংলায় চিৎকার করে উঠলাম, “দিদি, আমার স্কলারশীপ হয়ে গেছে!”।

সুখের দিন কি তাহলে শুরু হলো!

চলবে………

1 comment:

  1. Do you know Joy News BD helps you for finding any important News like all district news, customs news - import and export, business news, share bazar news, exclusive feature news, special news. You get this this information with in a secound when the things happen. Right now JoynewsBD covers whole Bangladesh from the latest chittagong news to Chittagong city news
    Chittagong port news
    Chittagong hill news
    Coxsbazar news
    Bangladesh customs news
    Bangladesh business news
    Bangladesh share bazar news

    ReplyDelete