প্রিয় উক্তি......

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়..........

Tuesday, October 18, 2022


ছোট গল্পঃ বোকা বোকাই 

হাসিবের সাথে বিয়ের প্রথম রাতেই শাহানা বুঝেছিলো তার স্বামী বোকা বোকাই কিসিমের লোক। যে কোন তুচ্ছ বিষয়েও সে হাসে, আর হাসে কার্টুন ছবির চরিত্রগুলোর মত।

এরেঞ্জড বিয়েতে প্রথম দেখাদেখির সময়ও মনে হয়েছিলো এমন, কিন্তু একটা বড়সড় ব্যাংকের আইটি বিভাগে কাজ করা সদা হাস্যোজ্বল হাসিবের ব্যাপারে অভিভাবকরা সবাই এতই মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন যে এ ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয়া হয় নি। 

বিয়ের পর ফিরানীতে এসে শাহানা যখন বড় ভাবীকে স্বামীর ব্যাপারে তার ধারনার কথা বলে অনুযোগ করছিলো, তখন ভাবীই বললেন এমন বোকা বোকাই স্বামীই ভালো, কথাবার্তা ঠিকঠাক শোনে। আর তখনই জানতে পারলো তার এত স্মার্ট বড় ভাইও নাকি আসলে বোকা বোকাই! 


যাহোক, সংসার জমে ক্ষীর হতে হতে শাহানার বোকা বোকাই স্বামী লোনে ফ্ল্যাট কিনলো, সাথে একটা ছোট খাটো গাড়ি! ক্ষীর জমার ততদিনে পাচ বছর হয়ে গেছে, সংসারের সদস্য বেড়ে হয়েছে চার! একটা বাড় বাড়ন্ত, সুখী সুখী সংসারের মুল নাটাই শাহানার হাতে, এই নিয়ন্ত্রন প্রথম থেকেই সে নিতে বাধ্য হয়েছিলো, তার পরিনাম যে ভালো হয়েছে তা নিয়ে কারোরই সন্দেহ নেই। কপালে একটা ভাজ ফেলে বিরক্তি মাখা স্বরে স্বামীকে যখন যা বলে স্বামী তা বিনা দ্বিরুক্তিতে মেনে নেয় সর্বদা, এই তো সুখী সংসারের মুল মন্ত্র! 

বিয়ের পাচ বছর পূর্তির এক মাস পর থেকেই করোনার জন্য সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলো। বেসরকারি চাকুরীজীবিদের অনেকেরই তখন সংগীন অবস্থা, কার চাকুরী কবে চলে যায়! শাহানার কপালে ভাজ বাড়লো আরও দুটা, একটা স্বামী সারাদিন বাসায় বসে থাকার বিরক্তির, অন্যটা বোকা বোকাই স্বামীর চাকুরী চলে যাবার। কিন্তু কিভাবে যেন বোকা বোকাই হাসিব করোনার মধ্যেও ব্যাংকের কাজ কারবার অনলাইনে ধুন্ধুমার চালানোর কোন প্রক্রিয়া বাতলে দিয়ে তেলেসমাতি দেখিয়ে দিলো, চাকুরীটা গেলো না, বরং ওয়ার্ক ফ্রম হোমের বদৌলতে ঘরেই ঘুরঘুর করতে লাগলো। 

কপালের ভাজ কমলো একটা শাহানার, তবে আরেকটা বাড়লো পুরো বাসা সামলানো বুয়া আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। আবার ভরসা সেই বোকা বোকা হাসিব। হে হে হে করে হাসতে হাসতে সে তখন থালা বাসন ধোয়, দেয়ালের কোনাকানার ঝুল ঝাড়ে, ম্যাজিক মপ দিয়ে ঘর মুছে দেয়। আর হাসে আর হাসে, তার সব কিছুতেই আনন্দ! পুরুষরা কেন সবকিছুতেই আনন্দ পায় সে এক বিস্ময় শাহানার কাছে! শাহানার কপালে ভাজ দুটো কমে আবারও একটা! 

ঐদিকে শাহানার বাসা সামলানো বুয়া, শিউলীর স্বামী জাহাংগীর এত বোকা বোকাই না। আগে চালাতো ল্যাগুনা, এক এক্সিডেন্টের পর দীর্ঘদিন ঘরে বসে ছিলো। সে সময় বস্তির এক মেয়ের সাথে কিঞ্চিৎ বেশী মাখামাখির আভাস পেয়ে শাহানা ম্যাডামকে ধরে হাসিবের ব্যাংকে ফুট ফরমাস খাটার একটা চাকুরী জুটিয়ে দিয়ে সংসার বাচিয়েছিলো। জাহাংগীরের বেতন তেমন কিছু না, কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যা ব্যস্ততায় থাকায় বেগানা-ইসকের ঝুকি কমলো। শিউলীরও তাই তখন কপালে ভাজ একটাই। কিন্তু করোনায় যখন তছনছ অবস্থা তখন জাহাংগীরের ছোট খাট চাকুরীতো গেলোই, উপরন্তু তার সারাদিন বাসায় বসে থাকার কারনে পূর্বের বেগানা-ইসকের আশংকায় সব মিলিয়ে শিউলীর কপালে ভাজ হলো তিনটা। 


শাহানার তখন বুয়া নেই, যদিও আগে বুয়া থাকলেও তো সপ্তাহে একদিন আসতো না। করোনাকালে স্বামী অনলাইনে অফিস করে, আর বাকী সময় বিপুল উৎসাহে ধোয়াধুয়ি, পয়পরিস্কারে শাহানাকে সাহায্য করে যায়। কিন্তু তাতে পুরো সাহায্য তো হয় না! কপালে একমাত্র ভাজ আর ক্লান্তি নিয়ে শাহানা যখন প্রায় সব মেনে নেয়ার অবস্থায়, তখন বুয়া আবার সপ্তাহে ৫ দিন করে আসা শুরু করলো। আগেও একদিন না আসা নিয়ে শাহানা অসন্তোষ জানাতো, ফিরে আসার পর বুয়ার দুই দিন কামাই দেয়া নিয়ে আরও একচোট ঝাড়ি দেয়া হলেও শিউলী নিরুত্তর, জাহাংগীর বাসায় বসে কি না কি করে বসে সে চিন্তায় পাহারা দেয়ার জন্য কামাই দেয়ার পরিমান যে বাড়াতে হচ্ছে এটাতো মুখ ফুটে বলা যায় না! 


কম বোকা বোকাই জাহাংগীরের বউ শিউলীর বুদ্ধিশুদ্ধি খুব চিকন পর্যায়ের। একদিন দুপুরের কাজ শেষে টিভি দেখতে ব্যস্ত শাহানার কাছে গিয়ে জানালো সপ্তাহে দুদিন না আসা নিয়ে সেও মাঝে মাঝে খুব অনুতপ্ত হয়, কিন্তু কি আর করা, বুয়া সিন্ডিকেটের নতুন সিদ্ধান্ত, দুদিন বাদ দিতেই হবে! তাই সে ঠিক করেছে কামাই দেয়া দুদিন পোষাতে সপ্তাহে দুদিন সে স্বামীকে সাথে করে নিয়ে আসবে বাসার বাজার সদাই, ফুট ফরমাশ, দেয়ালের ঝুলটুল পরিস্কার করে দেয়ার জন্য। এজন্য অল্প, মানে মাসে দুহাজার টাকা বাড়িয়ে দিলেই হবে! প্রস্তাব শুনে ঠোটের কোনে ক্ষীণ হাসির রেশ নিয়ে শাহানা জানিয়ে দিলো আপাততঃ এর দরকার নেই। শিউলীর সপ্তাহে দুদিন কামাই দেয়াকে সে মেনে নিয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির মতই। 


সন্ধ্যায় হতাশ শিউলী চলে যাবার পর শাহানা আয়নার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ভাবছিলো, শিউলী স্বামীকে কাজে লাগানোর যে বুদ্ধি করেছিলো সে একই কাজ এখন তার স্বামী হাসিবই করছে! অযথা মাসিক টাকার খরচ বাড়িয়ে কপালে নতুন ভাজ আমদানী করা কেন? কপালে এক ভাজই উত্তম, এর কম বা বেশী কোনটাই নয়! পুরুষ মানুষেরও বোকা বোকাই হওয়াই সবার জন্য ভালো।

Friday, May 28, 2010

ব্যবসা আর দেনা শোধের গল্প

লিখেছেন : মলিকিউল ০৮ অক্টোবর (বুধবার), ২০০৮ ৫:৫৮ অপরাহ্ন


দুইটা ১৮+ কৌতুক পইড়া আমারো খায়েস জাগলো একটা দেয়ার। ব্লগে যাদের দেখতেছি, কমন পড়ার সম্ভাবনাই বেশী। তাও দেই।

ব্যবসা আর দেনা শোধঃ দিনের ৩য় ১৮+


ছুটির একদিনে রাহাত তার বউ রেখারে নিয়া জন্মদিনের ড্রেসে বাথটাবে জলকেলী করতেছে। গায়ে ফেনা লাগায়া আবার ধোয়াধুয়িও চলতেছে। এমন সময় বাসার কলিং বেল বাইজা উঠলো। রাহাত আইলসামি কইরা কইলো "রেখা জান, তোয়ালে প্যাচাইয়া যাওনা, দেখো কে আইসে?"

স্বামীভক্ত রেখা তাই করে। একটা তোয়ালেতে শরীর ঢাইকা দরজা খুইলা দেখে পাশের বাড়ীর আনিস ভাই। জিগাইলো কি দরকার, রাহাত গোছলে আছে। আনিস একটু ভাইবা কইলো "আইছিলাম এমনিতেই, থাক পরেই আমু আবার। তয় আপনে চাইলে একটা ব্যবসা করতে পারেন। ইন্সট্যান্ট এখানেই।"

রেখা উৎসাহী হয়, কয় "কিরাম ব্যবসা?"

আনিস ব্যবসার প্রস্তাব দিলো তখন, "যদি আপনে তোয়ালের উপরের অংশ খুইলা দেখান, তাইলে আমি আপনেরে ৫০০০ টাকা দিমু।"। রেখার ভাবলো, শুধু তো দেখবো, ৫০০০ টাকা তো কম না। সে খুইলা দেখাইলো। আনিস চোখ ভইরা দেখলো আর দিলো ৫০০০ টাকা।

নেশা চাপসে দুইজনেরই। আনিস এইবার কইলো "যদি পুরাটাই খুইলা ফেলেন তাইলে দিমু আরো ৫০০০।"

রেখা ভাবলো একি কথা, দেখবোই তো। দিলো খুইলা। আনিস দেইখা আরো ৫০০০ দিয়া গেলো গা।

রেখা খুব খুশী, ১০০০০ টাকা এত সহজে ইনকাম হইলো, খুশীতে গেলো স্বামীরে জানাইতে। স্বামী রে কইলো "পাশের বাসার আনিস ভাই আইছিলো..।"

রাহাত কথা কাইরা নিয়া কয় " আনিসে টাকা দিছে নি, ১০০০০ টাকা পাইতাম, ধার নিছিলো।

Saturday, March 7, 2009

ছোট গল্পঃ বিপ্রতীপ

সোমা আর সুমন এলাকার নতুন আসার পর থেকেই ওদের দেখছি। একি এ্যাপার্টমেন্টে আমার পাশের ফ্ল্যাটে উঠলো এই নব-দম্পতি। আসার পরই পরই ওদের একই বিল্ডিং-এর বয়সে সিনিয়র হাসানভাই-লিমা ভাবির খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে যেতে দেখলাম। খুবই ঘনিষ্ঠ, তবে ঘনিষ্ঠতার ধরনটা একটু অন্যরকম।

সুমন লিমা ভাবির একনিষ্ঠ ভক্ত! ভাবির কোন কথায় সে মাটিতে ফেলে না, বাতাসে থাকতেই ধরে ফেলে, আমল করে। লিমা ভাবিকে খুব ব্যক্তিত্বসপন্ন মনে হয় তার কাছে। সোমা তার উল্টো, লিমা ভাবিকে সে তেমন গুরুত্বই দিতে চায় না, তার কথা “এই মহিলা যে কিভাবে হাসান ভাইয়ের মত লোকের ওয়াইফ হলো!”, অর্থ্যাৎ সোমার কাছে হাসান ভাই অসাধারন একজন মানুষ। তার ব্যক্তিত্ব-কথা-বার্তা-হাটাচলা সবই সোমার কাছে নায়কোচিত মনে হয়। তাই সংসারের খুটিনাটি নিয়ে হাল্কা মনোমালিন্যে হাসান-লিমা জুটি আসে অবধারিত ভাবে পারস্পরিক তুলনায়, পরস্পরকে ছোট করে যুদ্ধে জেতার চেষ্টায়। এমন না সুমন-সোমার সংসার খুব অশান্তির ছিলো বা ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো, তবে সব কিছুতেই হাসান ভাই-লিমা ভাবি! কি করবে? কি কিনবে? কোথায় বেড়াতে যাবে? সব কিছুতেই ওদের পরামর্শ নেয়া চাই, ওদের পরামর্শ মিললে ভালো, না মিল্লে প্রলয়…….

সময় যায়, দু’জনের মুগ্ধতা বিপ্রতীপ কোনে বাড়তে থাকে। সময়ে সংসারে নতুন মুখ আসে সোমা-সুমনের, একটা ফুটফুটে মেয়ে। এইবার আরেক যুদ্ধ, নামকরনের যুদ্ধ! সোমা-সুমন “এস” দিয়ে শুরু হওয়ায় মেয়ের ফার্স্ট নেম রাখে শাহানা, কিন্তু লাস্ট নেম রাখতে গিয়েই বিপত্তি! লিমা ভাবি বল্লেন নাম রাখো “শাহানা ইয়াসমিন”, সোমার পছন্দ হয় না তা, কারন হাসান ভাইয়ের মতে “ইয়াসমিন” নামটা ক্রিষ্টানদেরও হয়, বরং “শাহানা পারভিন” রাখা হোক, পারভিন মুসলিম নাম, আবার “প”তে পাক-পবিত্রও হয়! এনিয়ে ঝগড়া চলে কিছুদিন, তারপর অমিমাংসিত ভাবেই শেষ হয় ইস্যুটা, দুজনেই ভাবে স্কুলে ভর্তির সময় সে গিয়ে তার পছন্দের নামটা বসিয়ে দেবে, যে সুযোগ পায় সে সময়।

আরো কিছুদিন নিরুদ্রপ যায়, ছোট্র মেয়েটা বড় হতে থাকে, দেখতে থাকে বাবা-মা’র পছন্দের বৈপরিত্য। মাঝে মাঝে তাকে নিয়েই পক্ষ-বিপক্ষের কাড়াকাড়ি হয়, থোরাই বুঝে সে কি হচ্ছে! শুধু চিৎকার-চেচামেচি হলে নিজেই চিৎকার করে ওঠে, এতে সুমন-সোমা একটু থামে, একটু মনোযোগী হয় সন্তানের প্রতি।

এ সময়েই ঘটনা ঘটে একটা, ঘটনা মানে দুর্ঘটনা। একরাতে ডাকাত পড়ে সুমন-সোমার ফ্ল্যাটে, এ্যাপার্টমেন্টের অন্য কোন ফ্ল্যাটে না, শুধু তাদের ফ্ল্যাটেই। এ্যাপার্টমেন্টের গার্ডকে বেধে রেখে দোতলায় ওদের ফ্ল্যাটে ঠক ঠক! এরপর দরজা খুললেই হুড়মুড় করে ঢুকে তান্ডবলিলা। কিচেন থেকে বুয়া “কেডা এমন কইরা আইলো” বলে ডাকাতদের সামনে আসতেই এক থাপ্পড় দিয়ে বুয়াকে অজ্ঞান করে ফেলে রাখলো ডাকাতরা। এরপর তছনছ, সুমন-সোমাকে অস্ত্রের মুখে দাড় করিয়ে সোনা-দানা-দামি জিনিসপত্র-টাকা পয়সা নিয়ে বুক ফুলিয়েই চলে যায় ডাকাতরা, যাওয়ার আগে বলে যায়, পুলিশরে জানাইলে বা মামলা করলে খবর আছে!

পরদিন সকালে হইচই-চিৎকার, পুলিশকে ডাকবে কি ডাকবে না তা নিয়ে সোমা-সুমনের মল্লযুদ্ধ, যথারীতি পরামর্শক হিসেবে হাসান ভাই-লিমা ভাবি। লিমা ভাবির ধারনা গার্ডকে কিছু না করে বেধে রেখেছে! সুতরাং গার্ডও জড়িত এর সাথে, বেধে রেখে নাটক সাজিয়েছে সে, সুমন আশার আলো দেখে, ষড়য্ন্ত্রের গন্ধ পায়। হাসান ভাই পরেক্ষনেই নাকচ করে দেয় লিমা ভাবির ধারনা, তার মতে বুয়া এক চড় খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে এটা বিশ্বাসযোগ্য না, ডাকাতরা নিশ্চিত বুয়ার পরিচিত, নিশ্চিত ওদের মধ্যে যোগসাজোশ আছে! সুতারাং এটাই নাটক, বুয়াকে ধরে প্যাদানী দিলেই বেরিয়ে যাবে থলের বিড়াল। সোমা হইহই করে সাপোর্ট করে, সুমনের পছন্দ হয় না তা, সে গোয়ার্তুমি করে, সে গার্ডকে প্যাদানি দেয়ার পক্ষপাতি। পুলিশ পরে, আগে নিজেরাই প্যাদানি দেবে কিনা…..

যাই হোক, গল্প এ পর্যন্তই আমি জানি, কারন আমি ওখান থেকে চলে এসেছি এর পর, আসার আগে দেখেছি সুমন-সোমার ছোট্ট মেয়েটাকে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আকাশের পানে চেয়ে থাকতে, বুড়ি আংগুলটা মুখে দিয়ে……..

© শরীফ-আর রাফি

Friday, February 6, 2009

Patriotic Songs collection

Powered by eSnips.com


Thanks and Acknowledgment: S. Mahbub (smc in esnips)